Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:29 pm

‘নিম্নস্তর’ নিজেদের ‘কব্জায়’ চায় শতভাগ দেশিয় সিগারেট কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানির কারণে শতভাগ দেশিয় কোম্পানিগুলো ব্যবসা হারিয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। যদিও এই সিগারেট কোম্পানি আজকের নামি কোম্পানিদের ব্যবসার মূলধন ছিলো। মূলত দেশিয় কোম্পানি নিম্নস্তর বা নিম্নস্ল্যাবের সিগারেট উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু সেই নিম্নস্ল্যাবের সিগারেটে বহুজাতিক কোম্পানির কূটকৌশল আর ক্রমাগত আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। তাই আদি এই ব্যবসা বাঁচাতে বহুজাতিক কোম্পানিকে মধ্যম স্ল্যাব বা মধ্যম স্তরে রেখে নিম্নস্তর নিজেদের কব্জায় চেয়েছে শতভাগ দেশিয় সিগারেট কোম্পানিগুলো। সেজন্য শতভাগ দেশিয় মালিকানাধীন সিগারেট কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে দুইটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রোববার (২০ মার্চ) চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই প্রস্তাব দেয়া হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই দুইটি প্রস্তাব এনবিআর গ্রহণ করলে সিগারেট খাত থেকে রাজস্ব আদায় ২২ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

সভায় দেশিয় মালিকানাধীন সিগারেট কোম্পানির সংগঠন ‘লোকাল ওন্ড সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার মালিক সমিতির’ প্রতিনিধি আবদুল আউয়াল মোহন বলেন, বর্তমানে দেশের অনেক বৃহৎ ও নামকরা শিল্পগোষ্ঠীর উত্থান তামাক ব্যবসার মাধ্যমে। এবং সিগারেট খাত এই তামাক ব্যবসার একটি অংশ। সিগারেট খাতে ২০০৩ পূর্ববর্তী সময়ে অরাজক ও বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজমান ছিল। তখন এই খাতে শৃঙ্খলা আনার জন্য ২০০৩ সালে স্ল্যাব প্রথা প্রবর্তন করা হয় এবং নিম্নস্তর দেশিয় কোম্পানির জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। যা একটি অলিখিত সমঝোতা এনবিআর-এর উপস্থিতিতে সিগারেট মালিকদের মধ্যে ছিল। সেই সময়ে নিম্নস্ল্যাবে দেশিয় কোম্পানির বাজার হিস্যা ছিল শতভাগ। একমাত্র বিদেশি কোম্পানি যারা মধ্যম থেকে উচ্চস্তরে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করতো। কিন্তু ২০০৮-৯ সাল থেকে সেই বিদেশি কোম্পানি নিম্নস্তরের বাজারে আন্তর্জাতিক নামিদামি ব্র্যান্ডসমূহ এনে উৎপাদন ও বাজার জাত করতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশিয় কোম্পানিসমূহ ক্রমান্বয়ে বাজার হারাতে থাকে।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশিয় কোম্পানির বাজার হিস্যা ১০ শতাংশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে এবং বহুজাতিক বা বিদেশি কোম্পানির বাজার হিস্যা ৯০ শতাংশের বেশি। তখন দেশিয় কোম্পানিগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরে সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিম্নস্তরে মূল্য বিভাজন করে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক সিগারেটের প্রতি শলাকার দামের মধ্যে ন্যূনতম ১ টাকা পার্থক্য রেখে দাম নির্ধারণ করে বিশেষ আদেশ জারি করে। পরবর্তীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুমোদিত বাজেটে নিম্নস্তরে বাজারজাত করা বিদেশি কোম্পানির আন্তর্জাতিক সিগারেটের ব্র্যান্ড মধ্যম স্তরে উন্নীত করে, নিম্নস্তর শুধুমাত্র দেশিয় কোম্পানির দেশিয় সিগারেটের জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্তসমূহের কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। যার ফলে দেশিয় সিগারেট কোম্পানিসমূহ আরও বাজার হারিয়ে ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার পথে। এমনকি নিম্নস্তরে গত ১৫ বছরে প্রায় ৬৪২ শতাংশ সিগারেটের দাম বাড়ানো হয় এবং করভার বাড়ে ১১৫৪ শতাংশ। যার ফলে ২০১৭-১৮ সাল পরবর্তীতে দেশের বাজার চোরাচালান, নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোলের মাধ্যমে তৈরি অবৈধ সিগারেটে সয়লাব হয়ে যায়। এতে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের গোচরে আনার চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, দেশিয় সিগারেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মসংস্থান ও প্রায় ৫০ হাজার কৃষকের রুটি-রুজি জড়িত। এছাড়া এসব সিগারেট কোম্পানির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ব্যাংকের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ। সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি, শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) মো. মাসুদ সাদিক, সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (করনীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ, চেম্বার সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম, ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন, বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান, প্রথম সচিব ও প্রধান বাজেট সমন্বয়কারী ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম, প্রথম সচিব (করনীতি) মো. শহীদুল ইসলাম, প্রথম সচিব (মূসক নীতি) কাজী ফরিদ উদ্দীন প্রমুখ।

###