শেখ আবু তালেব: পুঁজিবাজারে তারল্য তথা বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারে যাদের বিনিয়োগ সীমার নিচে অবস্থান করছে, তাদেরই চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমন চিঠি দিতে পারে কি নাÑতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে।
পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের দর পতনে দুই শতাংশের সার্কিট ব্রেকার যেকোনো সময়ে উঠে যেতে পারেÑএমন গুজবও ছিল গত সপ্তাহে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা একটু সতর্ক অবস্থানে চলে গিয়েছেন। বিনিয়োগ বা লেনদেন না বাড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কী করবেন। এসব বিবেচনায় সর্বোচ্চ নিরাপদ পন্থা হলো লেনদেন থেকে কিছুটা বিরত থাকা। আর এটি করতে গিয়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত ২৪ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে অধিকাংশ শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে।
যদিও এই সময়ে লেনদেন সামান্য বেড়েছে। কিন্তু প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে। অন্য দুটি সূচক অবশ্য বেড়েছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া গেচে এমন তথ্য।
বিনিয়োগকারী ও বাজার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বাজার হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হচ্ছে স্টক মার্কেট বা পুঁজিবাজার। এখানে বিনিয়োগ বা শেয়ার লেনদেন করতে হয় কোম্পানির আর্থিক চিত্র, ব্যবসার গতি-প্রকৃতি ও অর্থনীতির হালচাল বুঝেই। বিনিয়োগ করার আগে শত বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এজন্য দক্ষতা ও বাজারের জ্ঞান সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের বেলায় এটি পুরোটা প্রযোজ্য না হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বেলায় এই পদ্ধতিই অবলম্বন করা হয়। বিশেষ করে ব্যাংক ও বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানাধীন তহবিল পরিচালনা করা হয় দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি দিয়ে। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের পাশাপাশি তাদের রয়েছে বাজার পর্যবেক্ষণ করার সক্ষমতা। দেশের পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ব্যাংকের সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শুধু মার্চেন্ট ব্যাংকই রয়েছে ৩৫টি। এসবের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে থাকে। দেশে ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। প্রায় সব ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। সবই করা হয় দক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। যাদের রয়েছে পেশাগত প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া ও অভিজ্ঞতা।
এজন্য পুঁজিবাজারে তারা হিসাব-নিকাশ করেই বিনিয়োগ করেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক পুঁজিবাজারে সব মিলিয়ে তার মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। এর বাইরে প্রতিটি ব্যাংককে বিশেষ তহবিল গঠন করে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি ঐচ্ছিক ব্যাংক চাইলে করতে পারে। কিন্তু কোনো ব্যাংকই বাধ্য নয়।
এতসব উদ্যোগের পরও সব ব্যাংকই তার সক্ষমতা বা বিনিয়োগ সীমার পুরোটুকু ব্যবহার করছে না। এতে সবগুলোই ব্যাংকই চাইলে আরও বিনিয়োগ করতে পারে। এটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু বিএসইসি চাইছে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়াক। তহবিলের যতটুকু বিনিয়োগ সীমা রয়েছেÑতার পুরোটা ব্যবহার করুক। এজন্য মৌখিক নির্দেশনার পাশাপাশি সর্বশেষ লিখিত চিঠিও দিয়েছে। এই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিএসইসি এমন নির্দেশনা দেয়ার এখতিয়ার বা আইনি ক্ষমতা রাখেন কি না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথায় কেউ বিনিয়োগ বাড়ালে তার দায় কে নেবে? যদি কোনো কারণে বাজার পতন ঘটে; তাহলে বিনিয়োগের ঝুঁকির দায় কি তারা নেবে। এতে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার যদি বিনিয়োগ করার সুযোগই থাকতো; তাহলে তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিতরা এমনিতেই বিনিয়োগ করতেন। এতে তাদেরই মুনাফা হতো। আবার ব্যাংক এখন বিনিয়োগ বাড়িয়ে কেনা শেয়ার কাদের কাছে বিক্রয় করবে; এমন প্রশ্নও উঠেছে। এসব বিষয় ভাবিয়ে তুলেছে বিনিয়োগকারীদের। এজন্য তারা সাইড লাইনে গিয়ে অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এর ফলে বাজার মিশ্র প্রবণতায় চলে গেছে।
সপ্তাহ শেষে দেখা গেছে, ডিএসইতে অংশ নেয়া ৩৯২টি সিকিউরিটিজের মধ্যে দর কমেছে ২৬৪টির, বেড়েছে ১০৫টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির। এ সময় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল বস্ত্র এবং ওষুধ খাতে। এছাড়া বিবিধ খাত ব্যতিরেকে সবগুলোতেই পতন দেখা গিয়েছে। সর্বোচ্চ শেয়ারের দর বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে পেপার ও প্রিন্টিং, ট্যানারি ও বিমা খাতে। পতন হয়েছে জ্বালানি, প্রকৌশল, আইটি ও সিরামিক খাতে।
একক কোম্পানি হিসেবে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল জেমিনি সি ফুড, সোনালী পেপার এবং ওয়াইম্যাক্স। আর পতনে ছিল ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, আইএফআইসি ব্যাংক ও বিডিকম অনলাইন।