নিয়ম ভেঙে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিল ন্যাশনাল ব্যাংকের

রোহান রাজিব: প্রিমিয়ার প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড নামীয় ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২০১৬ সালে ২০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের বনানী শাখা। নামসর্বস্ব এ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২০২০ সালে আরও ৬০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ দেয়া হয়। এ ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয় হয়। তবে সম্প্রতি ঋণটি খেলাপি হয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন করে তা পুনঃতফসিল করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক।

২০১৭ ও ২০২১ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে প্রিমিয়ার প্রোপার্টির ঋণটিকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া জালজালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ প্রদান ও আর্থিক অবস্থাও অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঋণের অর্থ পরিশোধ না করার কারণে চলতি বছরের গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে প্রিমিয়ার প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির দুটি ঋণ খেলাপি করে দেয় ন্যাশনাল ব্যাংক। তবে গত ২৫ জুলাই ঋণটি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪৮৬তম সভায় পুনঃতফসিলের জন্য উঠানো হয়। ওই বোর্ড সভায় ঋণটি পুনঃতফসিলের অনুমোদনও দেয়া হয়। মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে ঋণটি পুনঃতফসিল করা হয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালার লঙ্ঘন।

ঋণ পুনঃতফসিল বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাল-জালিয়াতি ও অনিয়ম-প্রতারণার ঋণ নিয়মিত করা যাবে না। এ নির্দেশনার পরও ঋণটি পুনঃতফসিলের সুবিধা দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক।

ঋণ অনুমোদনে যে অনিয়ম ঘটেছিল

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৭ সালের একটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের বানানী শাখা বরাবর প্রিমিয়ার প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের একটি লেটারহেড প্যাডে টাইপকৃত ২০০ কোটি টাকার একটি ঘূর্ণায়মান ঋণের জন্য আবেদন করা হয়। ঋণ আবেদনের সময় ন্যাশনাল ব্যাংকের বনানী শাখায় ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যাংক হিসাব ছিল না। তবে পরবর্তীকালে ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখায় প্রিমিয়ার প্রোপার্টির নামে চলমান একটি চলতি হিসাব (হিসাব নং-০০৬৭-৩৩০০১৪৬১১) গ্রাহকের অনুরোধে বানানী শাখায় স্থানান্তর করে একই নামে নতুন একটি চলতি হিসাব (নং: ১১০৬০০২০৪৮৪২৫) খোলা হয়।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও জানা যায়, ব্যাংকের বনানী শাখায় প্রিমিয়ার প্রোপার্টি হিসাব খোলার ফরম ও অন্যান্য কাগজপত্রে প্রতিষ্ঠানটির যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। ওই ঠিকানায় তাদের কোনো অফিস নেই। যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে, তা মূলত প্রিমিয়ার গ্রুপের একটি সাধারণ ঠিকানা, যা প্রিমিয়ার হোটেল ও অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড, বেঙ্গল টাইগার সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কনসার্ন ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হিসাবে ব্যবহƒত হয়।

এছাড়া প্রিমিয়ার প্রোপার্টি হিসাব খোলার ফরমে লেনদেনের যে তথ্য দিয়েছে, তাতে একক লেনদেনের ক্ষেত্রে জমা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা, নগদ উত্তোলন সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা এবং ড্রাফট/চেক/ট্রান্সফারের উত্তোলনসীমা সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাসিক জমা ১৫ লাখ এবং উত্তোলন ১৩ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্য নয়। এক্ষেত্রে প্রিমিয়ার প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টকে প্রকৃতপক্ষে একটি নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওই সময়ে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির হিসাব খোলার দিনেই ঋণ আবেদন করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অনুকূলে ১১ শতাংশ সুদে ২০০ কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ (ওভার ড্রাফট) সুবিধা দানের সুপারিশসহ ঋণ প্রস্তাব বনানী শাখা থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান শাখায় পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে শাখা থেকে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা (টার্ন ওভার) বিষয়ে সন্তোষজনক তথ্য ছিল না।

২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর ২০০ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উত্থাপন করা হয়। সভায় প্রিমিয়ার প্রোপার্টির আর্থিক অবস্থা, আয় ও মুনাফা অতিরঞ্জিত প্রদর্শিত হয়। ২০১৬-১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফার প্রবৃদ্ধি দেখানো হয় এক হাজার ৮০০ শতাংশ, যা পূববর্তী বছরের তুলনায় অস্বাভাবিক ছিল। এরপরও পরবর্তী বোর্ড সভায় ১০ শতাংশ সুদে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ২০০ কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ (ওভার ড্রাফট) সুবিধা অনুমোদন করা হয়। ওই দিনই বিষয়টি ন্যাশনাল ব্যাংকের বনানী শাখাকে প্রধান কার্যলয় থেকে জানানো হয়। এত বড় ঋণ অনুমোদনের সময় তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম শরিফুল ইসলামের স্বাক্ষর ছিল না। ঋণের অনুমোদনপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছুটিতে আছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের  অনুপস্থিতে এতো বিরাট অঙ্কের ঋণ প্রস্তাব পর্ষদে উপস্থাপন এবং ঋণ প্রস্তাবে গুরুতর অসংগতি থাকার পরও পর্ষদে ঋণ অনুমোদনের ঘটনা প্রথা বহির্ভুত, অস্বাভাবিক ও অনাকাক্সিক্ষত এবং এরূপ ঘটনা ব্যাংকের সুশাসনের জন্য সহায়ক নয় মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অস্বাভাবিক আর্থিক প্রাক্কলন প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি ব্যাখ্যা পাঠায়। ওই ব্যাখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রেও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নেয় ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ঋণের অর্থে হিলটন ঢাকা নামে ৩২ তলাবিশিষ্ট একটি পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ করা হবে। ওই ভবনের পঞ্চম তলা পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের পর ব্যাংকঋণের অর্থে অবশিষ্ট অংশ নির্মাণ করা হবে। এতে আয় বৃদ্ধি পাবে।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ন্যাশনাল ব্যাংকের বনানী শাখার কর্মকর্তারা গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনের বিপরীত পাশে একটি ১৩ তলা ভবনের (পাঁচতলা নয়) কাঠামো ওই পাঁচতলা হোটেল হিসেবে পরিদর্শক দলকে দেখান। তবে নির্মাণাধীন ভবনটির আশপাশে কোনো সাইনবোর্ড দৃষ্টিগোচার হয়নি। এ থেকে ওই ভবনের সঙ্গে হিলটন হোটেল বা ঋণের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে প্রতীয়মান হতে পারে। ঋণের অর্থ পুরোপুরি তুলে নেয়া হলেও ওই ভবন নির্মাণে তা ব্যবহƒত হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন মতে, প্রিমিয়ার প্রোপার্টির অনুকূলে ন্যাশনাল ব্যাংক যে ২০০ কোটি টাকার ঋণ ছাড় করেছে, তার সঙ্গে হিলটন ঢাকা নামক হোটেল প্রকল্পের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং ন্যাশনাল ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ করেছে, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

ঋণ বিতরণ ক্ষেত্রে রীতিনীতি না মেনে তড়িঘড়ি অর্থ সরিয়ে নেয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয়। নৈমিত্তিক ব্যয় নির্বাহের  উদ্দেশ্যে ঋণ অনুমোদন করা হলেও ঋণের নিয়ম অনুসরণ না করে এককালীন স্থানান্তরসহ বিভিন্ন সময়ে ঋণের অর্থ সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ব্যাংক এখতিয়ার-বহির্ভূতভাবে গ্রাহককে সহযোগিতা করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সীমার প্রায় এক হাজার ৫০০ গুণ অর্থ এককালীন ১০০ কোটি টাকার লেনদেনও বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়া হয়েছে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ‘রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ’ (আরজেএসসি) নিবন্ধিত সংঘ স্মারকের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংকিং লেনদেনের শর্ত লঙ্ঘনপূর্বক গ্রাহকের একক স্বাক্ষরে লেনদেনের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০০ কোটি টাকা ঋণসীমার বিপরীতে জামানতের ক্ষেত্রেও করা হয়েছে জালিয়াতি। ঋণটির জামানত হিসেবে ঢাকায় ৮ দশমিক ২৫ শতকের জায়গার ওপর নির্মিত একটি ভবনকে কোলেটারাল হিসেবে দেখানো হয়, যা ঋণের পরিমাণের তুলনায় খুবই সামান্য। এ ছাড়া রাজউকের অনুমোদন মেনে ভবনটি নির্মাণ হয়নি। ওই সম্পত্তি বিক্রয়ের পাওয়ার অব এটর্নিও ব্যাংককে দেয়া হয়নি। ফলে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকঋণ আদায়ের কোনো সুযোগ নেই বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।

প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণের সিংহভাগ প্রিমিয়ার প্রোপার্টির প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। আর চার কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখার আইবিসি পাওয়ার লিমিটেডের হিসাবে জমা করা হয়। ঋণের অর্থ স্থানান্তরের পূর্ব ওই হিসাব দুটিতে কার্যত কোনো লেনদেন হয়নি। পরে ওই ব্যাংকের গুলশান শাখায় ১০টি পৃথক এফডিআরের মাধ্যমে ১০১ কোটি টাকা রাখা হয় এবং বনানী বনানী শাখায় চারটি এফডিআরের মাধ্যমে ৮৪ কোটি টাকা রাখা হয়। সবগুলো এফডিআর খোলা হয়েছে মালিকপক্ষের একক স্বাক্ষরে। শর্ত অনুযায়ী দুইজন পরিচালকের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। 

পরিদর্শক দল ওই সময়ে উল্লেখ করে, অনিয়মের মাধ্যমে ন্যাশনাল ঋণ বিতরণ করার ফলে আমানতকারীদের প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঝুঁকিতে পড়েছে, যার দায় ন্যাশনাল ব্যাংকের ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত এমডি চৌধুরী মোস্তাক আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন গত ৬ আগস্ট শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটা আমি যোগদান করার আগের ঋণ। আগে কী হয়েছে জানি না। তবে সম্প্রতি ঋণটি বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি করে। এর পর আবেদন এলে বোর্ডে উঠিয়ে ঋণটি পুনঃতফসিল করি।’

নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম ভেঙে পুনঃতফসিল দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান নয়। নামি-দামি ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই দেয়া হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে যে ঋণে অনিয়ম পেয়েছে, তা পুনঃতফসিল করার সুযোগ নেই।

প্রণোদনার ঋণেও অনিয়ম

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একটি বিভাগের ২০২১ সালের প্রতিবেদন পর্যালোচনা দেখা যায়, নির্মাণাধীন প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটি টাকার ওডি (জেনারেল) প্রদান করা হয়, যার মেয়াদ ছিল ঋণ বিতরণের তারিখ থেকে এক বছর। তবে বারবার ঋণটি নবায়ন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। চলতি হিসাব থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পুরো টাকা উত্তোলন করার ফলে হিসাবটিতে কোনো জমা না থাকার কারণে সীমা অতিরিক্ত স্থিতি বিদ্যমান ছিল। ঋণ হিসাবটিতে ব্যবসায়িক কোনো লেনদেন ছিল না। আরোপিত সুদও সমন্বয় করা হয় না, যার ফলে বর্তমানে সুদসহ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৩৬ কোটি ৪৯ লাখ এক হাজার ৩৫ টাকা। এছাড়া ১৩ কোটি ৮৫ লাখ ৯ হাজার ৮৭৭ টাকার সুদ এখনো আরোপ করা হয়নি।

এত অনিয়মের পরও গত ২০২০ সালের ৩০ জুলাই ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪৩৯তম বোর্ড সভায় ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৬০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ অনুমোদন করা হয়। এ ঋণ অনুমোদেনের ক্ষেত্রেও অনিয়ম করা হয়।

জানা যায়, ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারিতে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত কিনা তা যাচাই করা হয়নি। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ওডি ঋণ অনুমোদনের জন্য শাখা হতে সুপারিশ না করে সদয় সিদ্ধান্তের জন্য ঋণ প্রস্তাবনা ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পাঠানো হয়। প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঋণ গ্রহীতার আবেদনের সঙ্গে প্রেরিত তথ্যের কোনো প্রকার যাচাই করা হয়নি। এক্ষেত্রে ঝুঁকি বিবেচনাও করা হয়নি।

প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ওডি ঋণের অর্থ ঋণদাতার ব্যবসার ধরন অনুসারে সরবরাহকারী বা অন্য পাওনাদারকে পে অর্ডার বা চেকের মাধ্যমে প্রদান করার কথা ছিল। কিন্তু একই দিনে একের অধিক চেক ব্যবহার করে ২০ কোটি টাকা ও ৩০ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়, যা অস্বাভাবিক এবং ঋণের অর্থের গতিপথ আড়ালের জন্য নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া লেনদেনের সপক্ষে কোনো ডকুমেন্টস জমা নেয়া হয়নি। ফলে ঋণের সদ্ব্যবহার ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দেয়া যাবে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ নেই। এমন প্রমাণ পেলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ম অনুযায়ী খেলাপি করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০