Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:39 pm

নিয়ম মানছে না বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো

আয়নাল হোসেন: পরিচালন নীতিমালা মানছে না বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। দেশের স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজগুলোর নিজস্ব জমি নেই। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লোর স্পেসও নেই। এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ বারবার তাগিদ দিলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তা পরিপালনে ব্যর্থ হচ্ছে। মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন ও ডিন্স কমিটির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ৩ ডিসেম্বর পরিদর্শন ও ডিন্স কমিটির সুপারিশে রাজধানীর পপুলার মেডিকেল কলেজ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও গ্রীনলাইফ মেডিকেল কলেজের নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে আসে। বিশেষ করে কলেজের অপর্যাপ্ত জমি, অপর্যাপ্ত ফ্লোর স্পেস, পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম পালনের জন্য সময় বেঁধে দেয়। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেও শর্তগুলো পূরণ করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ শিক্ষার্থী ভর্তির সক্ষমতাসম্পন্ন মেডিকেল কলেজ স্থাপনে মহানগর এলাকায় কলেজের নামে দুই একর এবং মহানগরের বাইরে চার একর জমি থাকতে হবে। একাডেমিক ভবন ও হাসপাতালের জন্য অন্যূন এক লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকা আবশ্যক। আসনসংখ্যা বাড়ানো হলে ফ্লোর স্পেসও বাড়াতে হবে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো এসব শর্ত পরিপালন ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।

চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে অসংখ্য মেডিকেল কলেজে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। খোদ ঢাকা মেডিকেল কলেজেও বেসিক সায়েন্স বিভাগে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। আর দেশের অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনা নীতিমালা অনুসরণ করছে না। রাজধানীতে যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগেরই জমি ও ফ্লোর স্পেস সংকট রয়েছে। এসব সংকট থাকা সত্তে¡ও প্রতি বছরই তারা শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করে আসছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানসম্মত চিকিৎসক গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার পরিবেশ ও ভালো মানের চিকিৎসা শিক্ষক প্রয়োজন, যা দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ) মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নীতিমালা মানবে না, যাদের পর্যাপ্ত জমি নেই, তাদের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তারা শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে তাদের সনদ বাতিল করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে পপুলার মেডিকেল কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত মেডিকেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাশুর মৌজায় ক্রয়কৃত ১১২ দশমিক ৩৬ কাঠার অতিরিক্ত আরও ২০ কাঠা জমি কলেজের নামে কিনে দলিলের সার্টিফাইড কপি জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। আগামী বছরের অক্টোবরের মধ্যে নিজস্ব জমিতে স্থাপনা তৈরি করে কলেজ স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। এ নিয়ম লঙ্ঘন করা হলে কলেজের অধিভুক্তি প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

কলেজের বর্তমান অবস্থানের ২০ কাঠা ও ২৫ দশমিক শূন্য ৯ কাঠা জমি সর্বশেষ ২০১৯ সালের জুলাইয়ের মধ্যে রেজিস্ট্রি করে দলিলের সার্টিফাইড কপি জমা দেয়া, অথবা মিরপুর মৌজায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সিড মাল্টিফিকেশন ফার্মের আট একর জমি পপুলার মেডিকেল কলেজের অনুক‚লে স্থায়ী ইজারা নেয়ার শর্ত পূরণ করা হয়নি। বারবার তাগিদ দেয়া সত্তে¡ও শর্ত কেন পূরণ করা হয়নি, তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পপুলার মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে আরও বলা হয়, জমি কলেজের নামে থাকার কথা থাকলেও মোহাম্মদপুর কাটাশুরে বিভিন্ন দাগে ৯টি দলিলে ১১২ দশমিক ৩৬ কাঠা জমি দলিলে গ্রহীতা হিসেবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নামে রয়েছে। এতে নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক স্বল্পতা পূরণে সময় দেয়া হয়েছে।

আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে বলা হয়, কলেজের বর্তমান জায়গায় ৮৬ দশমিক ৮৫ কাঠা জমি কলেজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু জমি নিবন্ধনের সার্টিফাইড কপি জমা দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। জমি বা ফ্লোর স্পেস কোনোটিই কলেজ ও হাসপাতালের নেই। নিয়ম অনুযায়ী আরও ৭০ শতাংশ জমি কলেজের নামে ক্রয় করে চলতি বছরের জুনের মধ্যে দলিলের কপি জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক স্বল্পতা পূরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর বড় মগবাজারে অবস্থিত ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে বলা হয়, কলেজ ও হাসপাতাল ভবনের বর্তমান অবস্থানে ট্রাস্টের নামের ৩১ কাঠা জমি ও ভবন এখনও কলেজের নামে সাবকবলা রেজিস্ট্রি করে দলিলের কপি জমা দেয়া হয়নি। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে দলিলের কপি জমা দেয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সেই শর্ত তারা পূরণ করতে পারেনি। এখানে অনেকগুলো শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণে তিন মাসের সময় দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে বলা হয়, কলেজের নামে ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং আয়শা মেমোরিয়াল স্পেশালাইজড হসপিটালের নামে ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এ জমি একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য যথেষ্ট নয়। হাসপাতাল ও কলেজের নামে নিয়ম অনুযায়ী জমি কিনতে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যপ্ত সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তা পূরণে ব্যর্থ হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে সেটি পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এছাড়া কলেজ ও হাসপাতালের একই নাম থাকার নিয়ম রয়েছে, যা এখানে নেই। শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টিও উঠে এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মবিন খান শেয়ার বিজকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা নীতিমালা মানছে না, তাদের ব্যাপারে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে, এটাই কাম্য।