Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:46 pm

নিয়ম মেনে খান গরু বা খাসির মাংস

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক: গরু বা খাসির মাংস দিয়ে তৈরি নানা খাবার বেশ মজাদার। তাই কোরবানি ঈদে কমবেশি সবাই এই লাল মাংস খেয়ে থাকেন। অনেকের হয়তো জানা নেই, দিনে কতটুকু মাংস খাওয়া উচিত বা লাল মাংস খাওয়ার নিয়ম কেমন। হয়তো এ কারণে অতিরিক্ত মাংস খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল মাংস স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে নিয়ম মেনে খেলে শারীরিক নানা সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও লাল মাংস মানবদেহে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই মাংস পরিমাণমতো খাওয়া উচিত।

আমরা সবাই জানি, মাংস প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস। এছাড়া এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। এসব উপাদান আমাদের দেহের বিকাশ ঘটাতে কাজ করে।

ভেড়া, গরু ও খাসির মাংস অর্থাৎ লাল মাংস আয়রনের চমৎকার উৎস। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।

সপ্তাহে একবার বা দুবার লাল মাংস ডায়েটে রাখা যেতে পারে। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না। মাংসে থাকা উচ্চ প্রোটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে। গরু ও খাসির মাংসে আরও থাকে জিঙ্ক, ভিটামিন বি ১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন ও রিবোফ্লেভিন থাকে।

জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়, আয়রন দেহের পেশিগুলোয় অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে, আর ভিটামিন বি১২ খাদ্য থেকে শক্তি জোগান দেয়।

মাংস বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যেমন ধূমায়িতকরণ ও লবণাক্তকরণসহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এর সঙ্গে বিভিন্ন উপকরণ মেশানো হয়ে থাকে। বেকন, সসেজসহ মাংসের বিভিন্ন খাবার প্যাকটজাত অবস্থায় কেনা হয়ে থাকে।

এসব প্যাকেটজাত মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে। এ খাবারগুলোয় স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও লবণ বেশি থাকে। এতে ভিটামিন ও খনিজ অনেক কম থাকে।

কতটুকু খাওয়া নিরাপদ: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন প্রায় ২১ গ্রাম লাল মাংস খান, তাদের তুলনায় যারা দিনে প্রায় ৭৬ গ্রাম লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস খান, তাদের অন্ত্রের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) অনুযায়ী, যারা নিয়মিত ৯০ গ্রামের বেশি লাল বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খান, তাদের কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো তিন আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। আনুমানিক একটা কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বান্ডিলের সমান টুকরার সমপরিমাণ মাংস খাওয়া ভালো।

সেইসঙ্গে চর্বি ছাড়া মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন গরুর শরীরের দুটি অংশ রয়েছে, যাতে পাবেন চর্বি ছাড়া মাংস। এ অংশগুলোয় চর্বির পরিমাণ চামড়া ছাড়ানো মুরগির থানের মাংসের চেয়েও কম। এই দুটি অংশ হলো রাউন্ড ও সিরলইন।

এ অংশগুলোর মাংসে চর্বির পরিমাণ থাকে সর্বনি¤œ ৪.২ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৮.২ গ্রাম, যেখানে মুরগির থানের মাংসে অভ্যন্তরীণ চর্বির পরিমাণ থাকে ৯.২ গ্রাম। তাই আপনি গরু, খাসি বা মুরগি যে মাংসই খান না কেন তার থেকে দৃশ্যমান চর্বি আলাদা করে সলিড মাংস খেতে হবে। তাহলে সুস্থ থাকা যাবে।

প্রতিদিন মাংস খাওয়া ঠিক নয়। পুষ্টিবিদদের মতে, সপ্তাহে একবার বা দুবার লাল মাংস খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি শরীরে প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে মাসের বিকল্প হিসেবে ডায়েটে মসুর, ছোলা, কিডনি বিন, মটর, মাখন, মটরশুঁটি, বেকড বিনস প্রভৃতি রাখা যেতে পারে। একই সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া বাদ দিন, দেহ থাকবে সুস্থ।