শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে মে মাসে নিয়োগ কমলেও দেশটির শ্রমবাজার সঠিক পথে রয়েছে। মে মাসে এক কোটি তিন লাখ কর্মসংস্থান কমেছে, যা এপ্রিলের তুলনায় কিছুটা কম। তবে মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ সুদহার সত্ত্বেও দেশটির শ্রমবাজার শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। খবর: ইউএসনিউজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকস এক প্রতিবেদনে জানায়, ব্যবসা ও সেবা খাতে তুলনামূলকভাবে কম পদ সৃষ্টি হয়েছে। মে মাসে উৎপাদন খাতেও কম পদ সৃষ্টি হয়েছে। এপ্রিলে কর্মসংস্থান কমে এক কোটি চার লাখ। মে মাসে বেকার ছিলেন প্রায় ৬০ লাখ নাগরিক। তবে এখনও দেশটিতে একজন আবেদনকারীর জন্য অন্তত দুটি চাকরির সুযোগ রয়েছে, যা দেশটির স্মরণকালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চাকরি ছাড়ার হারও কিছুটা কমেছে। এ সময় ৪২ লাখ মানুষ চাকরি ছেড়েছেন।
এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হারের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কভিড-১৯ মহামারি-উত্তর সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সঙ্গে দেশটির মূল্যস্ফীতি বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ও দ্রব্যমূল্যের দাম আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক দফায় সুদের হার বাড়িয়েছে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ। সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে ফেড, যা ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি বছর মার্চের পর এটি তৃতীয়বারের মতো এবং ১৯৯৪ সালের পর এটি সর্বোচ্চ সুদহার বৃদ্ধির ঘটনা। গত মাসে মূল্যস্ফীতি অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধির পর সুদহার বাড়ানোর এ ঘোষণা দেয় ইউএস ফেড। এ সময় সামনের মাসগুলোয় সুদহার আরও বাড়ানোর মতো দৃশ্য দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফেডারেল ব্যাংকের বৈঠকের পর বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চলতি বছর শেষ নাগাদ সুদহার ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে। আগামী বছর নাগাদ এ হার ৪ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধকি ঋণ, ক্রেডিট কার্ডসহ অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে জনসাধারণের খরচের হার বাড়িয়ে তুলবে।
আএনজি’এস আঞ্চলিক গবেষণা প্রধান প্যাডরেইক গার্ভে বলেন, মূল্যস্ফীতি হ্রাস করার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে ফেড কর্মকর্তাদের কটূক্তি না করে আমাদের আর কিছু করার নেই। আমরা চলতি মাসেও সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির আশঙ্কা করছি, এতে কর্মসংস্থান আরও কমতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ফেড তাদের নীতি থেকে কতটা সরে আসতে পারে।
চলতি মাসের প্রথম দিন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ জুনের কর্মসংস্থানের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, জুনে দুই লাখ ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ ৭৫ হাজার পদ সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা মে মাসের (তিন লাখ ৯০ হাজার) তুলনায় কম। তবে ভোক্তাদের ব্যয় ও উৎপাদন কমে আসার কারণে দেশের অর্থনীতির গতি শ্লথ হলেও শ্রমবাজার স্থিতিশীল রয়েছে। নানা জরিপ বলছে, প্রতিষ্ঠানগুলো চাকরির বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, মন্দা সত্ত্বেও যে ধারা পরিবর্তন হওয়ার শঙ্কা নেই। জুনে শিল্পোৎপাদন খাতের কার্যক্রম নি¤œমুখী ছিল। ওই মাসে কারখানার কার্যক্রম দুই বছরের সর্বনি¤œ ছিল। যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কঠোর করে চলেছে ফেডারেল রিজার্ভ। ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্টের (আইএসএম) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো শিল্পোৎপাদন কারখানায় কর্মসংস্থান কমেছে, যদিও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছে। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভোক্তা ব্যয় প্রবৃদ্ধি মাঝারি ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পোৎপাদন খাতের কার্যক্রমে শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন, নতুন বাড়ির কাজ শুরুর কার্যক্রমও নি¤œমুখী ছিল। এতে চলতি বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ফের অর্থনৈতিক সংকোচনের আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।