নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. নসরুল হামিদ বলেছেন, সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছাতে হবে এবং গ্রাহকরা যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। জাতির জনক স্বাধীনতা দিয়েছেন আর শেখ হাসিনা দেবেন উন্নত বাংলাদেশ। দেশ দ্রুত মধ্যম আয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই কাজ করলে অল্প সময়েই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

গতকাল শনিবার বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আয়োজিত পবিসগুলোর জেনারেল ম্যানেজার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎসচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। সম্মেলনে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং বাপবি বোর্ডের সদস্য (প্রশাসন) মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো নিজ নিজ ভৌগোলিক এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে না। এ ব্যাপারে কেউ নির্দেশনা ভঙ্গ করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ট্রান্সফরমার পোড়ার হার আরও কমাতে হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করতে হবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পিডিবির লোড শেয়ারিং আনুপাতিক হারে করতে হবে। লোড বরাদ্দের ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা যায় কি না, তা যাচাই করা হবে। তিনি আবাসিক সংযোগ এক দিনে দেওয়ার নির্দেশনা দেন। প্রয়োজনে দ্রুত সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকের মালিকানা দলিলের পরিবর্তে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে দ্রুত সংযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যত্রতত্র পোল দিয়ে পরিকল্পনাহীনভাবে লাইন নির্মাণ করায় ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এজন্য রাজধানীর আশপাশের সমিতিগুলোতে আপাতত ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড কেব্ল ব্যবহারের নির্দেশ দেন। বর্তমানে পবিসগুলোর কলেবর যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে না, বিধায় এ ব্যাপারে ওয়ার্কশপ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে এলেও তা শেষ হয়ে যায়নি। গ্রাহক সংযোগ প্রদানে আরও স্বচ্ছতার উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি। দেশের ৮০ শতাংশ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হবে এবং এতে পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে সরকারের সাফল্য আসবে। গ্রিডের অভাবে যেসব সমিতি বিদ্যুৎ গ্রহণ করতে পারছে না, সেসব সমিতির জিএমকে গ্রিড নির্মাণ সম্পর্কে একটি জরিপ প্রতিবেদন তার কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, সিস্টেম লস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে লাভজনক সমিতির সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সমিতিগুলো নিজস্ব অর্থায়নে প্রি-পেইড মিটার ক্রয়পূর্বক গ্রাহক প্রান্তে স্থাপন করতে হবে। কারণ ১ শতাংশ সিস্টেম লস কমলে বছরে প্রায় ১২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একটি সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণের নির্দেশনা দেন তিনি।

সম্মেলন উপলক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব বাপবি বোর্ড কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং বিতরণ সংস্থার মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পাওয়ায় অভিনন্দন জানান। তিনি দ্রুত গ্রাহক সংযোগ প্রদানের জন্যও আহ্বান জানান। শিল্প সংযোগের জন্য ২৮ দিন এবং আবাসিকের ক্ষেত্রে একদিনে সংযোগে প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেন তিনি। এছাড়া পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া সংযোগ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বাপবি বোর্ডের বর্তমান কার্যক্রমের ধারা অব্যাহত রাখার জন্যও পরামর্শ দেন।

বাপবি বোর্ডের চেয়ারম্যান বর্তমান অবস্থা, বিভিন্ন অর্জন, ব্যর্থতা, কারিগরি ও আর্থিক বিশ্লেষণ, শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ, লাইন নির্মাণ ও উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা, লক্ষ্যমাত্রা, প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন, বাপবি বোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য দেন। শতভাগ উপজেলা বিদ্যুতায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মোট ৪৬০টি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ৩৬ হাজার ৯১২ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৬টি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং আরও সাতটি প্রকল্প বিবেচনাধীন আছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা এক কোটি ৭৮ লাখ। আগামী জুনে আরও নতুন ২২ লাখ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হবে। এতে গ্রাহকসংখ্যা হবে দুই কোটি। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ব্যাপক সফলতার কারণে বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহে বাপবিবো দেশের সেরা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার লাভ করে।

ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে অনলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ, ই-জিপি, এসএমএস বিলিংসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য বাপবি বোর্ড ইতোমধ্যে চারটি সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করেছে। এছাড়া ৪০টি সোলার সেচ পাম্প স্থাপনের পাশাপাশি আরও দুই হাজার সোলার সেচ পাম্প স্থাপনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাপবি বোর্ডের  উদ্যোগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৫ হাজার কিলোমিটার লাইন এবং ৮৪টি উপকেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০