শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতার পদক্ষেপ হিসেবে নিজেদের জ্বালানি খাতে সমৃদ্ধ করতে চাইছে যুক্তরাজ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে স্বনির্ভরতার জন্য পরিকল্পনা করছে দেশটি। এর অংশ হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে উইন্ড ফার্মের সংখ্যা বাড়াতে চায় যুক্তরাজ্য। এছাড়া আমদানি করা তেল ও গ্যাসের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চায় যুক্তরাজ্য। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সচিব ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উইন্ড ফার্ম বাড়ানো হবে এবং একই সঙ্গে জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক শক্তির সমন্বয়ে ‘জ্বালানি কৌশল’ প্রণয়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বিদেশি দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তাই উইন্ড ফার্ম নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার চেয়ে নিরাপত্তা ইস্যুই প্রাধান্য পাচ্ছে দেশটিতে। যদিও বিষয়টি কনজারভেটিভ পার্টির জন্য বিতর্কিত।
বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন বায়ু ও সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানো সরকারের নতুন কৌশল, যা ব্রিটেনকে আমদানি তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে। যুক্তরাজ্যের ব্যবসা, জ্বালানি ও শিল্প সচিব কাওয়াসি কুয়ারটেং গত সপ্তাহে এক টুইটে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা কার্বন নিঃসরণ এখন বড় ইস্যু নয়। যুক্তরাজ্যের ক্লিন এনার্জিতে স্বনির্ভরতা এখন জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। পুতিন গ্যাসের দাম বাড়াতে পারেন, কিন্তু তিনি নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক শক্তির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
তথ্যমতে, ২০৩৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৬৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় যুক্তরাজ্য, ২০৫০ সালের মধ্যে যা শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। টরি দলের কয়েকজন আইনপ্রণেতা এই মুহূর্তে শেল গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে। এতে আমদানিনির্ভরতা কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে তাদের ধারণা এবং এতে নিরাপদে থাকা যাবে। তবে বেশিরভাগ ক্যাবিনেট মন্ত্রী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার বাড়াতে চান।
গত সপ্তাহে বরিস জনসন জানিয়েছিলেন, চলতি বছর শেষে রাশিয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে তেল আমদানি বাদ দেবে যুক্তরাজ্য। বর্তমানে দেশটির চার শতাংশ গ্যাস ও আট শতাংশ তেলের জোগানদাতা রাশিয়া। ইইউ দেশগুলোয় রাশিয়া থেকে ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ২৭ শতাংশ তেল আমদানি করা হয়। তাই রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনতে নতুন জ্বালানি কৌশলে উইন্ডফার্মকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে মনে করেন আইনপ্রণেতারা। তবে ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এ ধরনের অনেক অবকাঠামোর কাজ স্থগিত করেছিলেন, যা আবার চালু করতে চাইলে নাগরিকদের বাধার মুখে পড়বে সরকার।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ একই পথে হাঁটতে চাইছে। নিরাপত্তার জন্য জার্মানিও গ্রিন ও ক্লিন এনার্জির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। যেমন জার্মানির সরকার গত সপ্তাহে ক্লিন এনার্জি খাতে ৩০০ কোটি ইউরো খরচ করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডার নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে ‘স্বাধীন জ্বালানি শক্তি’ মনে করেন। এ ধরনের জ্বালানি জার্মানির অর্থনীতি, সমাজ ও সর্বোপরি রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করেন তিনি।
যুক্তরাজ্য সরকার মনে করে, জ্বালানি নিরাপত্তাই জাতীয় নিরাপত্তা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সস্তা ও তুলনামূলক বেশি নিরাপদ, জ্বালানি নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ। ২০২০ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে যুক্তরাজ্যের ৪৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, ৪০ শতাংশ আসে গ্যাস, তেল ও কয়লা থেকে। বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় পারমাণবিক শক্তি থেকে। গত বছর অক্টোবরে বরিস জনসন ঘোষণা দেন, ২০৩৫ সাল থেকে দেশের শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।