শেয়ার বিজ ডেস্ক: টয়োটার মালিকানাধীন গাড়িনির্মাতা কোম্পানি দাইহাটসু আগামী জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত তাদের চারটি প্ল্যান্টের উৎপাদন স্থগিত করেছে। উৎপাদিত পণ্যের নিরাপত্তা ইস্যুতে মিথ্যাচারের অভিযোগ স্বীকার করার পর এই সিদ্ধান্ত নিল কোম্পানিটি। খবর: বিবিসি ও জাপান টাইমস।
দাইহাটসু জানিয়েছে, তারা তিন দশক ধরে তাদের নির্মিত ৬৪টি মডেলের গাড়ির নিরাপত্তা পরীক্ষার ফলে জালিয়াতি করেছে।
কোম্পানিটি বেশ কয়েকটি প্ল্যান্ট বন্ধ করেছে। প্ল্যান্টগুলোর মধ্যে সবশেষটি হলো ২৫ ডিসেম্বর বন্ধ হওয়া জাপানের ওসাকায় অবস্থিত তাদের প্রধান কার্যালয়। দাইহাটসুর ওইটা, শিগা ও কিয়োটো প্ল্যান্টের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর ওসাকা প্ল্যান্টের প্রোডাকশন লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়।
এই কেলেঙ্কারির ফলে দেশটিতে থাকা তাদের ৯ হাজার কর্মী বিপদে পড়েছেন। এ কারণে বৈশ্বিক গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটার খ্যাতিতেও প্রভাব পড়তে পারে। কেননা কেলেঙ্কারির অন্তর্ভুক্ত ৬৪টি মডেলের মধ্যে ২৪টি মডেলের গাড়ি সরাসরি টয়োটা ব্র্যান্ডের অধীন বিক্রি করা হয়।
দাইহাটসু গতকাল বুধবার জানিয়েছে, পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্তের ফলে অপরাধ স্বীকার করার পর তারা সব পণ্যের চালান বন্ধ করে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, উৎপাদন চালু রাখার চাপ থাকার কারণে গাড়িগুলোর নিরাপত্তা পরীক্ষার ফলে মিথ্যা তথ্য দেয় তারা।
কোম্পানিটি বলেছে, কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য করণীয় নির্ধারণে তারা তাদের প্রধান সরবরাহকারীদের সঙ্গে কাজ করবে। কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, জাপানের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ পায়নি, তাদের এমন সব সাব-কন্ট্রাক্টরদেরও তারা সহায়তা করবে।
তারা আরও বলেছে, প্ল্যান্টগুলো বন্ধ থাকার সময়ে সরাসরি বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে এমন ৪২৩টি স্থানীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে তারা ক্ষতিপূরণ দেবে। টয়োটার মালিকানাধীন ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ১ দশমিক ১ মিলিয়ন বা ১১ লাখ গাড়ি বিক্রি করে থাকে। তাদের বিক্রির এই পরিমাণ টয়োটার বার্ষিক ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি গাড়ি বিক্রির ১০ শতাংশ।
মোটরশিল্প বিশেষজ্ঞ ডেভিড বেইলি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে বলেন, গাড়ির সংঘর্ষ পরীক্ষার ফল নিয়ে মিথ্যাচার করায় গত এপ্রিলে এই সমস্যাটি শুরু হয়েছে। পরবর্তী সময়ে টয়োটার একটি স্বাধীন তদন্তকারী কমিশন এয়ারব্যাগ ও গতি পরীক্ষা-সংক্রান্ত আরও সমস্যা খুঁজে পায়।
তিনি আরও বলেন, মূল পণ্যগুলো অনিরাপদ হওয়ার কারণে এই মুহূর্তে কোনো পরামর্শ নেই। যেটা হয়েছে তা হলো যে উপাদানগুলো দিয়ে তৈরি গাড়ি পরীক্ষা করা হয়েছে, সেই উপাদানগুলো বিক্রি হওয়া গাড়িতে না দিয়ে সেগুলোয় অন্য উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই বড় সমস্যা তৈরি করেছে।
ফ্লোর ম্যাট ও অ্যাক্সিলারেটর পেডাল-সংক্রান্ত ইস্যুতে ২০০৯ সালে গাড়ি ফেরত চাওয়া এবং ২০১২ সালে সমস্যাগ্রস্ত উইন্ডো সুইচ ইস্যুতে ইয়ারিস, করোলা ও ক্যামরি মডেলের সাত মিলিয়ন বা ৭০ লাখের বেশি গাড়ি ফেরত চাওয়ার কারণে টয়োটার সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ডেভিড বেইলি বলেছেন, ওই সময় গাড়ি ফেরত চাওয়ার ঘটনায় টয়োটায় মৌলিক পরিবর্তন এসেছিল।
তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিবর্তে টয়োটা তাদের পণ্যের মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া শুরু করে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে টয়োটা মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করলেও এটা তারা তাদের অধীন দাইহাটসুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেনি।
জাপানের বার্তা সংস্থা দ্য জাপান টাইমস জানিয়েছে, সব ধরনের স্থানীয় ও বৈশ্বিক গাড়ির চালান বন্ধের ঘোষণা দেয়ার দুই দিন পর ডাইহাটসু শুক্রবার আবার ইন্দোনেশিয়ায় চালান সরবরাহ শুরু করার ঘোষণা দেয়।
প্রসঙ্গত, টয়োটা ২০২০ সালে যান্ত্রিক ক্রুটি থাকার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৪ লাখ গাড়ি তুলে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টয়োটার বিভিন্ন মডেলের ২৯ লাখ গাড়ি তুলে নেয়া হয়। এর মধ্যে ছিল ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তৈরি করোলা গাড়ি, ২০১১ থেকে ২০১৩ সালে তৈরি ম্যাট্রিক্স এবং ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এভালন হাইব্রিড গাড়ি।