নিরাপত্তা ঝুঁকিতে মহেশখালীতে হচ্ছে না এলএনজি টার্মিনাল!

ইসমাইল আলী: কক্সবাজারের মহেশখালীতে পাওয়ার হাব গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে উৎপাদন হবে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এজন্য সেখানে পৃথক কয়লা ও এলএনজি টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায় শেষ পর্যন্ত এলএনজি টার্মিনাল মহেশখালীতে নির্মাণ করা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে টার্মিনালটি সরে যেতে পারে পায়রা বন্দর এলাকায়। সম্প্রতি পেট্রোবাংলায় জমা দেওয়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জাপানের আর্থিক সহায়তায় দেশটির টোকিও গ্যাস ইঞ্জিনিয়ারিং সল্যুশন ও নিপ্পন কোয়াই যৌথভাবে সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে এলএনজি টার্মিনালের জন্য ছয়টি স্থানকে বিবেচনা করা হয়। পরে দুটি স্থানকে চূড়ান্ত হিসেবে সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

যদিও এলএনজি খালাসে এরই মধ্যে দুটি ভাসমান স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলো মূলত এলএনজিবাহী কিছুটা পুরোনো জাহাজ, যেগুলোকে রূপান্তর করা হয়। তবে এগুলোর সক্ষমতা কম হওয়ায় দুটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনালও নির্মাণ করবে বাংলাদেশ।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি এলাকায় দুটি করে মোট ছয়টি স্থানকে সমীক্ষার জন্য সুপারিশ করেছিল পেট্রোবাংলা। এগুলো হলোÑ পায়রার উত্তর ও দক্ষিণ, কুতুবদিয়ার উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহেশখালীর কেন্দ্র ও দক্ষিণ। আর স্থানগুলোর যোগ্যতা বিবেচনায় জাতীয় উন্নয়ন নীতি, টার্মিনাল এলাকার প্রাপ্যতা, পরিবেশগত বাধা, অর্থনীতি ও জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা এ পাঁচটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

ছয়টি এলাকার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে স্রোত নিরোধক বাঁধ (ব্রেকওয়াটার), ক্যাপিটাল ও ১৫ বছরের মেইনটেনেন্স ড্রেজিং, সমুদ্র থেকে তীর পর্যন্ত নির্মিতব্য ভাসমান কাঠামো, সমুদ্রের তীরে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং এলএনজি পরিবহনে পাইপলাইন নির্মাণ ব্যয় বিবেচনা করা হয়।

আর্থিক ব্যয় বিবেচনায় ছয়টি স্থানের মধ্যে কুতুবদিয়ার কেন্দ্রে প্রস্তাবিত স্থানটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ব্যয় সবচেয়ে কম। এক্ষেত্রে মাত্র ১০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং ও আট কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করতে হবে। আর কুতুবদিয়ার উত্তরে টার্মিনাল নির্মাণে ড্রেজিং করতে হবে ২০ লাখ ঘনমিটার ও পাইপলাইন নির্মাণ করতে হবে ১৪ কিলোমিটার। অথচ পায়রায় ড্রেজিং করতে হবে ১৪ কোটি ৫০ লাখ থেকে ১৫ কোটি ঘনমিটার ড্রেজিং। আর পাইপলাইন নির্মাণ করতে হবে ১৬০ কিলোমিটার। এতে টার্মিনাল নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সবচেয়ে আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয় কুতুবদিয়া উত্তরকে। এরপর রয়েছে মহেশখালী কেন্দ্র। আর এলএনজি টার্মিনালের জন্য তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মহেশখালী দক্ষিণ, পায়রা উত্তর, পায়রা দক্ষিণ ও কুতুবদিয়া দক্ষিণ।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। এতে একই পাইপলাইনে দেশের মূল ভ‚খণ্ডে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। তবে সুনামি, সাইক্লোন ও সন্ত্রাসী হামলার কারণে একই এলাকায় দুটি টার্মিনাল নির্মাণের ঝুঁকিও রয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু বিবেচনায় পায়রা উত্তর ও দক্ষিণ হবে টার্মিনালের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।

অর্থনৈতিক সাশ্রয় বিবেচনায় দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কুতুবদিয়া উত্তর ও দ্বিতীয় টার্মিনাল মহেশখালী কেন্দ্রে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিবেচনায় পায়রা বন্দরের উত্তরে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল ও কুতুবদিয়া উত্তরে দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এক্ষেত্রে পায়রায় ড্রেজিং ও পাইপলাইন নির্মাণ ব্যয়কে প্রকল্পের বাইরে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ শেয়ার বিজকে বলেন, গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানিতে জোর দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরই জাতীয় গ্রিডে এ গ্যাস যুক্ত হবে। ধীরে ধীরে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়বে। এজন্য টার্মিনাল দরকার রয়েছে। এক্ষেত্রে কোথায় এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হবেÑতা এখনও চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই শেষে এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মহেশখালী মাস্টারপ্ল্যানে এলাকাটিতে এলএনজিভিত্তিক সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ২০৪১ সালে ২৪ লাখ ৩৪ হাজার টন গ্যাস লাগবে। এজন্য এলএনজি টার্মিনালে বছরে ২৫টি জাহাজ ভেড়ার কথা রয়েছে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০