নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ: রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতের আহবান

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সব রোহিঙ্গাকে মাতৃভ‚মিতে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিদ্যমান অবস্থা সরেজমিন দেখার জন্য বাংলাদেশে ও সম্ভব হলে মিয়ানমারে ফিল্ড মিশন পরিচালনার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সূত্র: বাসস।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বৃহস্পতিবার মিয়ানমার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে (৩৭ বিধির আওতায়) এ কথা বলেন। গতকাল প্রাপ্ত এক বার্তায় এ কথা জানা যায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোয় এবং সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আমাদের দেশে আশ্রয় নেওয়া সবার নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও স্থায়ী প্রত্যাবর্তন চায়।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ রাখাইন রাজ্য সম্পর্কিত অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সহায়তা করতে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অবিলম্বে কাজ শুরু করতে চায়।

মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গত তিন দশকের অভিজ্ঞতায় এটা স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কমে যাওয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার গতি হারিয়ে যায়।

মাসুদ বলেন, এজন্য আমরা বিরাজমান সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের লক্ষ্যে বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের আলোচ্যসূচির মধ্যে চলমান রাখতে পরিষদের প্রতি আহŸান জানাই। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধানে বাংলাদেশের আহŸান পুনর্ব্যক্ত করেন।

সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উদ্ধৃত করে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, সমস্যার মূল রয়েছে মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারে খুঁজতে হবে।

মোমেন বলেন, মিয়ানমার ২০১৭’র আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে জিরো লাইনের ২০০ মিটারের মধ্যে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত দুই ডিভিশন সেনা মোতায়েন করেছে।

গত মঙ্গলবারসহ মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও ড্রোন ১৯ বাার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন রোধে সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে। এছাড়া গুলি করে বাংলাদেশের একজন জেলেকে হত্যা করা হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বারবার এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ও ইচ্ছাকৃত উসকানির মুখেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করছে। দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল দেশ হিসেবে ক‚টনীতি, আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এ সংকটাপন্ন পরিস্থিতির স্থায়ী শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে আমরা এগিয়ে যাব। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে সাধারণ পরিষদে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন।

রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘের বরাত দিয়ে বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় পাঁচ লাখ লোক। তিনি বলেন, বড় ধরনের সমস্যা সত্তে¡ও বাংলাদেশ এ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা নিগৃহীত এ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।

মোমেন বলেন, বাংলাদেশ এ বিতাড়িত মিয়ানমার নাগরিকদের মৌলিক মানবিক সহায়তা দিচ্ছে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ও এগিয়ে এসেছে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে বর্তমানে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ৯ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নির্বিচার হত্যা ও নির্যাতনকে ইতোমধ্যে ‘জাতিগত নিধনের টেক্সটবুক দৃষ্টান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া তার ভাষণেও এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।

মোমেন বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের এটা অনুসন্ধান করে দেখার দায়িত্ব রয়েছে যে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান এবং পরবর্তী ঘটনা ‘শান্তির প্রতি’ হুমকি ও ‘শান্তি ভঙ্গ’ কি না এবং শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কী করা যায়।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছেÑরাখাইন রাজ্যে থাকা বেসামরিক রোহিঙ্গাদের নিঃশর্ত সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে মিয়ানমারের ভেতরে জাতিসংঘ শাসিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, সব ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়, বিশেষত রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছার বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারের অবশ্যই পূর্ণ ও অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে বাংলাদেশ উগ্রবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কথিত হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা জানিয়েছে এবং ‘সমন্বিত টহল’, ‘যৌথ পরিদর্শন’ ও এমনকি ‘যৌথ অভিযান’-এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ দমনে মিয়ানমারকে সহায়তারও প্রস্তাব দিয়েছে।

তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমাদের এত সব প্রচেষ্টা সত্তে¡ও মিয়ানমারের সিনিয়র নেতারা বলছেনÑঅভিযুক্ত উগ্রবাদীরা ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ অথচ এর কোনো যুক্তিসংগত ভিত্তি নেই। তাছাড়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সে দেশে অভিবাসী হয়েছে বলে বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০