Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:28 pm

নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিন

দেশে শ্রমিকরা কর্মস্থলে নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কিছু দুর্ঘটনা বেশি সংখ্যক প্রাণহানির কারণে অতি আলোচিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাজরীন ফ্যাশনস দুর্ঘটনা, রানা প্লাজা ধস। এ দুটি কারখানার একটিও জাহাজভাঙা শিল্পের মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। সম্প্রতি সেজান ফুডসের কারখানায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক মারা গেছেন। সেটি সে অর্থে অগ্নিদুর্ঘটনা ঝুঁকিতে থাকা প্রতিষ্ঠান ছিল না। হাতে গোনা কয়েকটি দুর্ঘটনার কথা আমরা জানি, মনে রাখি। যারা কর্মস্থলের পরিবেশ ও দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করে; তাদের মাধ্যমে আমরা প্রকৃত অবস্থা ধারণা পাই। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি) কর্তৃক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়, দেশে ২০২৩ সালে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন খাতে এক হাজার ৪৩২ শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৫০২ জন। আগের বছর নিহত হয়েছিলেন ৯৬৭ জন এবং আহত হয়েছিলেন ২২৮ জন। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় নিহত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ৪৬৫ এবং আহত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ২৭৪।

রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডের বাইরে দুর্ঘটনায় কারখানা প্রতি বছর কত শ্রমিক নিহত হন সেটি হওয়ার কথা নয়। কেননা প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই শোনা যায় প্রতিকারে নেয়া ব্যবস্থার কথা। কিন্তু আমরা কি আদৌ সচেতন হয়েছি। কলকারখানা অধিদপ্তর কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন না করেই সনদ দেয়, এমন প্রমাণও মিলেছে।

আমাদের শিল্পমালিকরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন নন এ অভিযোগ পুরোনো। অগ্নিকাণ্ডে বেশিসংখ্যক মানুষ মারা গেলে সেটি গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়, সবাই জানতে পারে। পোশাক শিল্পমালিকরা বিদেশি ক্রেতা বা আন্তর্জাতিক চাপে অনেকটা বাধ্য হয়ে কারখানায় অগ্নিঝুঁকি ইস্যুতে নজর দেন। কিন্তু অন্য খাতগুলোয় শ্রমিকের নিরাপত্তা উপেক্ষিতই বলা চলে। বিশ্লেষকরা বলেন, শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা লঙ্ঘিত হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখলেও শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ঝুঁকিতে রয়েছেন। অথচ বিদ্যমান আইনেই তাদের সুরক্ষা দেয়া সম্ভব। কেবল আইন পরিপালনের বিষয়টিকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নজরদারি করতে হবে তদারককারী সংস্থাকে।

দাহ্য পদার্থ ব্যবহার হয়Ñএমন শিল্প-কারখানায় শ্রমিকস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ঘটনা না ঘটলেও মানহীন পরিবেশে কর্মরত শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। শ্রমিককল্যাণ রাষ্ট্রগুলো এসব ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেয়, তার কিছুটা অন্তত চর্চা করতে পারি আমরা।  কয়েক বছর ধরে আমাদের পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলো পুরস্কার পেয়ে আসছে। কিন্তু শিল্পকারখানাগুলো যেভাবে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল, পরিচালিত হওয়ার কথা; সেভাবে হচ্ছে। শুধু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে, পাশাপাশি শ্রমিকরাও কর্মস্থলে মারা যাচ্ছেন। দুর্ঘটনা আর অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকদের নির্মম মৃত্যু হলেই কিছু দিনের জন্য কারখানার পরিবেশ ও সুরক্ষা নিয়ে কথা বলি। আমরা মনে করি, সব অংশীজনের সম্মিলিত প্রয়াসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করা গেলে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।