বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে মানুষের ঘিঞ্জিপূর্ণ আবাসস্থল দেখা যায়। এসব মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য শ্রেণিভেদে দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি রয়েছে। মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে প্রতিটি রাস্তার দুপাশেই ফুটপাতের ব্যবস্থা থাকে, যেন প্রতিটি মানুষ নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে চলাচল করতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, ফুটপাত কোনো নাগরিকের চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয়। এসব ফুটপাত যেন কিছু মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। রাস্তার দুপাশেই ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বিভিন্ন রকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে রেখেছে। এতে মানুষ চলাচলে বিঘ্ন ঘটলেও সেদিকে কারও খেয়াল নেই। অনেকেই ঘর ভাড়া করে দোকান দিতে পারবে না বলে ফুটপাতে এসে ব্যবসা শুরু করে। এজন্য কোনো নাগরিক স্বস্তিতে চলাচল করতে পারে না। আমাদের রাজধানী শহরের দিকে খেয়াল করলেই দেখতে পাওয়া যায় এর করুণ পরিণতি।
রাজধানীর সবচেয়ে ঘিঞ্জি এলাকা হচ্ছে গুলিস্তান। গুলিস্তানসহ এর আশেপাশে ছোটখাটো এলাকাগুলোয় সন্ধ্যার পর বের হলেই প্রকৃত অবস্থা অনুভব করা যায়। প্রতিটি ফুটপাতে জামাকাপড়, বিভিন্ন পানীয়, নকল প্রসাধনী, মাছ, মাংস, শাকসবজি, জুতার দোকানসহ আরও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রি করা হচ্ছে। ভ্যানে করে এপাশ-ওপাশ করে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে, যেজন্য সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছে সাধারণ জনগণ। সময়ের অপচয় হচ্ছে এসব রাস্তায় বের হলেই। শুধু তাই নয়, একটু বেখেয়াল হলেই হচ্ছে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। কখন কী হয়ে যায় শত শত মানুষের কেউ টেরই পায় না। এতে ভোক্তাদের চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো লোক রাস্তায় দোকানঘর বানিয়ে জায়গা দখল করে ব্যবসা করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অনেকেই চিন্তা-চেতনাহীনভাবে রাস্তায় এমনভাবে ব্যবসা শুরু করে মনে হয় নিজের জায়গা, যা সম্পূর্ণ অযাচিত। এতে মানুষের চলাচলে বিঘœ ঘটে। এর পাশাপাশি নাগরিকরা ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে বড় রাস্তায় নেমে পড়ে, যার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, তারা কেউই টাকা ছাড়া জায়গা নিয়ে কাজ করছেন না। তারা কোনো না কোনো মহাজন, বড় ভাই কিংবা কোনো সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে জায়গাগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভাড়া নিচ্ছেন, যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। সরকারি জায়গা নিয়ে অন্য কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। রাজধানীর গুলিস্তানে গেলে সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় ফুটপাত ব্যবসায়ীদের। তারা তিল পরিমাণ জায়গা রাখেন না চলাচলের জন্য। তাছাড়া ফার্মগেট, বনানী, শাহবাগসহ শহরের প্রতিটি জায়গায়ই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ফুটপাত ব্যবসা। ইসলামের এ বিষয়ে অনেক বিধান রয়েছে। ফুটপাতে ব্যবসা বৈধ না কি অবৈধ, এ বিষয়ে ইসলামি স্কলাররা বিভিন্ন কথা বলেছেন। ফুটপাতে ব্যবসা বৈধ, তবে তা যদি কাজকর্মে বিঘ্ন না ঘটিয়ে করা হয়। ইসলামি পণ্ডিতরা এ বিষয়ে দুটি শর্ত তুলে ধরেছেন। প্রথমত, পথচারীর চলাচলে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটিয়ে রাস্তার দুপাশেই ব্যবসা করা জায়েজ। প্রথম শর্ত ফুটপাতে ব্যবসা করার ফলে যেন পথচারীর কোনো অসুবিধা না হয়। যানবাহন চলাচল করার কোনো অসুবিধা না হয়। যদি মানুষের চলাচলে ও যানবাহনের ক্ষেত্রে অসুবিধা না হয় তাহলে বৈধ। দ্বিতীয়ত, ব্যবসা করার জন্য অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেকোনো ব্যবসা করতে হলে রাষ্ট্র ঘোষিত ট্রেড লাইসেন্স তথা ব্যবসা করার অনুমোদন নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স তথা ব্যবসার অনুমোদন নেয়া ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য করা আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ ও অপরাধযোগ্য। সব ব্যবসা ও স্বাধীন পেশার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যবস্থার অনুমোদন নিতে হবে। এমনকি ফুটপাতে বসে যদি ফল কিংবা টংয়ের দোকানে চা বিক্রি করা হয়, সেজন্যও লাইসেন্স জরুরি। ফুটপাত বা রাস্তার পাশে যে ব্যবসাই হোক না কেন ট্রেড লাইসেন্স তথা ব্যবসার অনুমোদন নিতে হবে। কেননা রাষ্ট্রের ঘোষণা হলো এমন, ‘১৯৮৬ সালের মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন ট্যাক্সেশন বিধিমালার ৪৪(১) বিধি অনুসারে সিটি করপোরেশন এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।’ সুতরাং উল্লিখিত শর্ত দুটি মেনে নেয়া সাপেক্ষে ফুটপাতে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। সুতরাং সব ফুটপাত ব্যবসায়ীর উচিত আইনের বিধান মেনে চলা।
রামিছা বিলকিছ জেরিন
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়