ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা প্রতি বছরই হজব্রত পালনার্থে সৌদি আরব যান। লাখ লাখ মুসলমানের এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিশাল এক কর্মযজ্ঞও। হজকে তাই ধর্মীয় পর্যটন বললেও বোধকরি ভুল হয় না। প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের নাগরিকরাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এখান থেকে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ হজে যান। দুঃখজনক হলো, হজ নিয়ে প্রতি বছরই বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ওঠে। বিশেষত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ গমনেচ্ছুদের ভোগান্তি নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এবার অবশ্য ঝক্কি এড়াতে আগেভাগেই সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে হজের মৌসুম ঝামেলামুক্ত হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
গতকালের শেয়ার বিজে ‘আগামী বছরের জন্য হজ চুক্তি ১৩ ডিসেম্বর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়, হজ নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত। মূলত হজের সময় ভোগান্তি এড়াতেই এ পদক্ষেপ। বিষয়টি ইতিবাচক। তবে আগামী বছরের হজ প্যাকেজে বাংলাদেশিদের বাড়তি অর্থ গুনতে হবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সৌদি আরবে পরিবহন, আবাসনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় হজের সার্বিক ব্যয়ও বাড়ছে। এটি হজযাত্রীদের জন্য ভালো খবর নয় অবশ্য। এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।
প্রতি বছর হজ মৌসুমে ফ্লাইট বিপর্যয়, হজ এজেন্সির অনিয়ম, পাসপোর্ট জটিলতাসহ নানা অনিয়ম দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি বাড়ে হজযাত্রীদের; অনেকে সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও হজে যেতে ব্যর্থ হন। এটি বেদনাদায়ক। হজযাত্রা নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের অনেক আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রস্তুতি থাকে। সারা জীবনের সঞ্চয় নিয়েও হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন অনেকে। সেখানে এমন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ই বেশি সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এর অবসান জরুরি। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে আগেই তা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী। শুধু তাগিদ দিলে হবে না; যে এজেন্সি ও ব্যক্তি এতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি খরচে যারা হজে যান, তাদের অনেকে অনিয়মে জড়ান। এগুলো বন্ধ করতে হবে। যারাই এতে জড়িত থাকুন না কেন, সবার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কিন্তু ক্রমে দৃঢ় হচ্ছে। হজ ছাড়াও তেলবাণিজ্য, জনশক্তি রফতানি, এমনকি সামরিক সম্পর্কও রয়েছে দেশটির সঙ্গে। এ অবস্থায় হজ মৌসুমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সুযোগ রয়েছে। এবার হজের খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তা সহনীয় রাখার উদ্যোগ নেবে বলেও আমরা আশা করব। গত বছরের একটি পরিসংখ্যান বলছে, সৌদি আরব হজ উপলক্ষে এক হাজার দুশ’ কোটি ডলার আয় করেছে। হজযাত্রীরাও প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেন। এর বড় অংশ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। এতে বাংলাদেশিদের অবদান কিন্তু কম নয়। এর সুযোগ নিয়ে সরকার হজের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা আদায়ে তৎপর হবে বলেই আমরা মনে করি।
দেশ থেকে অনেকে আগে হজে গিয়ে অপরাধে জড়ান বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এদের কারণে অন্য হাজযাত্রীরা সমস্যায় পড়েন; ভাবমূর্তিও নষ্ট হয় দেশের। এদের চিহ্নিত ও প্রতিহত করার আয়োজনও আমরা দেখতে চাইব। সাধারণ হাজীদের জন্য হালনাগাদ করা তথ্য জোগানোও জরুরি। নিজ স্বার্থে আরও সতর্ক হতে হবে তাদের।
নিরাপদ হজযাত্রা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিন এখনই
