আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড (পিএফআইএল) গত ছয় মাসেও দুটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেনি। এগুলো হচ্ছেÑ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত এবং চলতি হিসাব বছরের ৩১ মার্চ ২০২৩ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন। কোম্পানিটির ২০২২ হিসাব বছরের ছয় মাস শেষ হয়েছে এবং চলতি ২০২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষ হয়েছে চার মাস হতে চলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেনি।
এদিকে দুটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সময় বৃদ্ধিতে গত ২৮ মে আবেদন জানায় কোম্পানিটি। তবে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বৃদ্ধির আবেদন বিবেচনায় নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে দেরি হওয়ার কারণ জানাতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে সময় বৃদ্ধির আবেদন নাকচ করে উল্লিখিত বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন।
তথ্যমতে, আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির হিসাব বছরের প্রতি প্রান্তিক বা তিন মাস অন্তর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। সে হিসাবে বছরে চারটি প্রান্তিক হয়। সে ক্ষেত্রে কোম্পানিকে প্রতি বছর তিনটি প্রান্তিক এবং একটি বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। আলাদাভাবে চতুর্থ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয় না। এদিকে আইন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে হিসাব বছর শেষ হওয়ার দিন থেকে ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়ার বিষয়ে বলা আছে। অন্যথায় দেরি হলে কোম্পানিকে প্রতি কার্যদিবসের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রথম প্রান্তিক শেষ হওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। যদি কোম্পানি নির্দিষ্ট সময়ে আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়; এক্ষেত্রেও প্রতি কার্যদিবসে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। সে হিসাবে কোম্পানিটির হিসাব বছর শেষ হয়েছে গতকাল পর্যন্ত শুক্র ও শনিবার বাদে ১৪৬ কার্যদিবস এবং প্রথম প্রান্তিক শেষ হয়েছে ৮১ কার্যদিবস। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি দুটির কোনোটিই প্রকাশ করতে পারেনি। সেই সঙ্গে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের আইন অনুযায়ী এর কারণও কোম্পানিটি প্রকাশ করেনি। তাই কোম্পানির সময় বৃদ্ধির আবেদন বিবেচনায় নিতে অপারগতা জানিয়েছে এবং এর কারণ প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
এর আগে গত ২৮ মে কোম্পানির আবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করে বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিশন ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ শেষ হওয়া বছরের এবং ৩১ মার্চ ২০২৩ শেষ হওয়া প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বাড়াতে কোম্পানির আবেদন বিবেচনা করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হওয়ার কারণ অবিলম্বে প্রচার করার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) নিয়মমালা, ২০২২ অনুযায়ী মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে শেয়ার বিজ থেকে কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ সায়েদুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেয়া হলে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো উত্তর দেননি।
উল্লেখ্য, ফিনিক্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই ২০২২-সেপ্টেম্বর ২০২২) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটি লোকসান করেছে। হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৫১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল ৯ পয়সা। অন্যদিকে হিসাব বছরের নয় মাসে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ৬৫ পয়সা ইপিএস হয়েছিল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৬ টাকা ০৪ পয়সা।
এদিকে কোম্পানিটি গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটির বড় লোকসান হয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ১১ পয়সা লোকসান হয়েছে। আগের বছর শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা আয় হয়েছিল। আলোচিত বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল মাইনাস ৮ টাকা ২৬ পয়সা। আগের বছর ক্যাশ ফ্লো ছিল ৪ টাকা ৬৯ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৭ টাকা ৫৪ পয়সা।