মানি লন্ডারিং তথা অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী এক গুরুতর সমস্যা। এটি পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এ কাজে জড়িতরাও অব্যাহতভাবে কৌশল পাল্টাচ্ছে। এতে আইন সংশোধন ও যুগোপযোগী করতে হচ্ছে বারবার।
মানি লন্ডারিং বা অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বরাবরই এগিয়ে। এতে শূন্য সহনীয়তা (জিরো টলারেন্স) নীতি অবলম্বন করছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং এ আইন দুটির আওতায় জারিকৃত বিধিমালার সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো পরিপালনে একটি নির্দেশনা জারি করে তা দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি ও সিইওর কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা শাখা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। রোববার শেয়ার বিজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বেনামে, ছদ্মনামে বা শুধু নম্বরযুক্ত কোনো গ্রাহকের হিসাব খোলা বা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন রেজুলেশনের আওতায় সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তি বা সত্তা এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কোনো হিসাব খোলা বা পরিচালনা করা যাবে না।’ নির্দেশনায় গ্রাহক নির্বাচন নীতিমালা এবং এজেন্ট ব্যাংকিং-সংক্রান্ত নির্দেশনা বিশদভাবে সংযোজিত হওয়ায় এটি অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে আরও অর্থবহ ও কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে বলে আশা।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথমে বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ প্রণয়ন করে। ওই বছরের ৭ এপ্রিল আইনটি কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগ এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ইউনিট চালু করে। সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণীত হয়। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের (সংশোধন) মাধ্যমে বিএফআইইউকে আইনি ক্ষমতা দিয়ে আলাদা প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে। দুদক ছাড়াও বিএফআইইউ কর্তৃক গঠিত একাধিক কমিটি ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আইন সংশোধনের মাধ্যমে। পরে ওই আইনগুলোকে আরও কার্যকর করতে বিভিন্ন সময় আইন সংশোধন করা হয়। দেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত¡াবধানে কর্মশালাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে ব্যাংকগুলো।
এটি বৈশ্বিক সমস্যা বলে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশেষ করে বিআইএফইউ এক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনগুলোর সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এটি প্রশংসনীয়। গত কয়েক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এটি জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, সন্দেহ নেই। এ প্রশ্নও উঠছে যে, কেলেঙ্কারির এসব অর্থ পাচার হয়েছে কি না কিংবা তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যয়িত হয়েছে কি না।
আইন প্রণয়ন কিংবা আইনের প্রয়োগই অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। এ কাজে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ গ্রাহক যাতে হয়রানির শিকার না হয়, লক্ষ রাখতে হবে সেদিকেও।
Add Comment