গুজব ছড়ালেই আইনি ব্যবস্থা

নির্দেশনার পর বদলে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্যর ধরন

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ‘পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো ধরনের গুজব ছড়াইলেই তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনা হবে।’ বাংলাদেশ সিকিউরিজ আ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এমন নির্দেশনার পরপরই বদলে গেছে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন গ্রুপ পেজসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া মন্তব্যের ধরন।

ফেসবুকসহ বিনিয়োগকারীদের তৈরি অনেক পেজ রয়েছে। এসব পেজ থেকে বেশিরভাগ সময়েই কোন শেয়ারের দর বাড়বে, কোন শেয়ারের দর কমবে, কোন কোম্পানি কত লভ্যাংশ দিতে পারে, কোন কোম্পানিতে গেম্বালরা ঢুকেছে কত দিনের মধ্যে বেরিয়ে যাবে, কিংবা ইনবক্সে আসুন আইটেম দিচ্ছি, শর্ত ১০ শতাংশ কমিশন দিতে হবে আগামীকালের আইটেম ইনবক্সে এ ধরনের পোস্ট দেখা যায়। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে শোনা যায় এ ধরনের গুজব, যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিএসইসি একটি নির্দেশনা জারি করেছে।

গত বুধবার বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসইর নাম ও লোগো ব্যবহার করে গুজব ছড়ালে আইনি ব্যবস্থা নেবে পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

একইভাবে কোন সিকিউরিটিজের দর বাড়বে বা কমবে, বা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলে এমন বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো তথ্য ছড়ানো ব্যক্তি বা দলকে এ-জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এ ধরনের কাজ ও গুজবের জন্য বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সিকিউরিটিজ আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এমনটি জানানো হয়। বিএসইসির দেওয়া নির্দেশনায় বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর নাম ও লোগো সংশয়মুক্ত রাখতে ব্যক্তি ও দলীয় পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইল বা পেজে ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যৎ দর নিয়ে যে কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী ও অপ্রকাশিত তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

ডিএসই ইনভেস্টর ক্লাব, ডিএসই স্মল ইনভেস্টর প্রফিট ক্লাব, ডিএসই শেয়ার বিজনেস, স্টক মার্কেট মেম্বারসহ আর কিছু পেজ দেখা যায়। এসব পেজে প্রায় পুঁজিবাজার নিয়ে নানা মন্তব্য দেখা যায়। এছাড়া কিছু ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি (বেশিরভাগই ফেক আইডি) থেকেও পাওয়া যায় একই ধরনের মন্তব্য, যার বেশিরভাগই গুজব। এতে প্রভাবিত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। অনেকেই এসব গুজবে কান দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। এতে বেশিরভাগ সময়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন ভুক্তভোগীরা। এসব গুজবকারীদের দমন করার লক্ষ্যেই বিএসইসি কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যার কারণে সুর বদলিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

গতকাল ডিএসই ইনভেস্টর পেজ থেকে জি আর সুমন খান নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘খুব ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করবেন। পরামর্শ নেওয়া ভালো কিন্তু কারও কথায় প্রভাবিত হয়ে বিনিয়োগ করবেন না।’ একইভাবে ডিএসই ইনভেষ্টর ক্লাবের অন্য একটি পেজ থেকে এই পেজের সঙ্গে যারা রয়েছেন তাদের তথ্যনির্ভর এবং সুন্দর সুন্দর পোস্ট করার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যান্য যোগযোগমাধ্যমেরও একই অবস্থা। কোথাও পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য নেই।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, যারা গুজব ছড়াবে তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনা হবে, এটা বিএসইসির ভালো সিদ্ধান্ত। এতে গুজব কমে যাবে। আর গুজব কমে গেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। কারণ গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, এটা বিএসইসির খুব ভালো সিদ্ধান্ত। যারা এ ধরনের গুজব ছড়ায়, তাদের বড় ধরনের শাস্তি হওয়া দরকার। ফেসবুক বা অন্য যোগাযোগমাধ্যমে এসে পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা বেআইনি। পৃথিবীর কোথাও এমন দেখা যায় না। পুঁজিবাজার নিয়ে কথা বলতে হলে তাদের একাডেমিক সনদ লাগে। কিন্তু আমাদের দেশে এর বালাই নেই, যার যা খুশি তা বলে দেন। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। যে কোনো মূল্যে তাদের দমন করা দরকার। এটা করা উচিত পুঁজিবাজারের স্বার্থে।

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, শুধু ফেসবুক ও পেজ থেকেই নয়, অনেক সময় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকেও গুজন ছড়ানো হয়। কিন্তু তাদের বিষয়টি বরাবরই আড়ালে থেকে যায়। তাই এদিকটাতে বেশি নজর রাখা দরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০