নির্দেশনা না মানায় বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে নির্দেশনা না মানার প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত কমিটি। ব্যাংকের তৈরি করা তদন্ত প্রতিবেদনের খসড়ায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে বৈদ্যুতিক কেটলি (ওয়াটার হিটার) ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা লঙ্ঘন করে কেটলি নেওয়া হয়েছে, যা আগুন লাগার আশঙ্কা ত্বরান্বিত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন। তবে গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, এরই মধ্যে প্রতিবেদনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন শিগগিরই জমা দেব।

তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবন ব্যবহারের সময় থেকেই নির্দেশনা রয়েছে, সেখানে ইচ্ছেমতো কোনো বৈদ্যুতিক ডিভাইস কিংবা এ ধরনের হিটার বা কেটলি ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ সেটি মানেনি। তারা কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই কেটলি ভেতরে নিয়েছে। এটা পুরোপুরি নির্দেশনা লঙ্ঘন। অবহেলার কারণে বিভাগের প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের দায় নিতে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কমিটি ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু সুপারিশও করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তিন সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটিকে ২৮ মার্চ ও ফায়ার সার্ভিসের কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটির প্রধান ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব.) মো. মাহমুদুল হক খান চৌধুরী ও তফাজ্জল হোসেন।

এদিকে কোনো ধরনের ভুল বা অসতর্কতা ছিল কি না, তা ক্ষতিয়ে দেখছে ফায়ার সার্ভিসের গঠিত কমিটি। কমিটির সদস্যরা গতকাল ব্যাংকের আগুন লাগা বিভাগসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পৃথকভাবে জিজ্ঞাসা করেছেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ব্যাংকের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।

সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, আমরা এসেছি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবানবন্দি নিতে। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত যতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়, ততজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। বাকিদের আগামীকাল (বুধবার) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি সঠিকভাবে জানার জন্য এ জিজ্ঞাসাবাদ। আমরা অনেক কাজ এগিয়ে নিয়েছি। আশা করছি, নির্ধারিত পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।

তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, আমাদের মহাপরিচালক যে পাঁচ কার্যদিবস নির্ধারণ করেছেন আজ (মঙ্গলবার) তার দ্বিতীয় দিন। অফিসিয়ালি যেসব কাগজপত্র চাওয়ার, তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চেয়েছি। কিছু তথ্য দিয়েছেন। তবে ব্যাংকের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখানোর জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখনও পাইনি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০