Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:37 am

নির্দেশনা ভেঙে আইএফআইসিকে সুবিধা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রোহান রাজিব: অবসরে যাওয়ার পর কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পাঁচ বছর হওয়ার আগে ওই ব্যাংকের উপদেষ্টা বা পরামর্শক হতে পারবেন না, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনা রয়েছে। ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে ও ব্যবস্থাপনায় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতেই এমন বিধান করেছে সংস্থাটি। তবে বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের সদ্য অবসরে যাওয়া এমডিকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে সম্প্রতি অনাপত্তি বা অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের তৈরি করা নির্দেশনা নিজেরাই ভঙ্গ করেছে।

গত ১১ মে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এই নিয়োগ অনুমোদন দেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এদিকে আইএফআইসি ব্যাংকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি শাহ আলম সারওয়ার তার অফিশিয়াল ফেসবুক ও লিঙ্কডইন অ্যাকাউন্টেও শেয়ার করেন।

জানা যায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ পান শাহ আলম সারওয়ার। গত ১২ মে এমডি হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়। দীর্ঘ ১১ বছর ছয় মাস ব্যাংকটির এমডির দায়িত্ব পালনের পর অবসরে যান তিনি। অবসরে যাওয়ার আগেই ‘কৌশলগত উপদেষ্টা’ হিসেবে তাকে নিয়োগের জন্য ব্যাংকটির বোর্ড অনুমোদন দেয়। বোর্ড অনুমোদনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠানো হয়। তার অবসরের আগে অর্থাৎ ১১ মে ‘কৌশলগত উপদেষ্টা’ নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও অনাপত্তি দেয়। এরপর গত ২৬ মে থেকে তিনি ব্যাংকটির ‘কৌশলগত উপদেষ্টা’ হিসেবে যোগদান করেন।

আইএফআইসি ব্যাংক সূত্র জানায়, তিনি আগের মতো এমডির কক্ষে বসেই কৌশলগত উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শুধু পদবি বদল করা হয়েছে। আগের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্থলে কৌশলগত উপদেষ্টা শব্দ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যাংকটিতে এখনও পূর্ণকালীন এমডি নিয়োগ হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকটিতে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সৈয়দ মনসুর মোস্তফা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দুই বছরের জন্য তাকে ‘কৌশলগত উপদেষ্টা’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রতি মাসে বেতন অনুমোদন করা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

আইএফআইসি ব্যাংক তাকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালের চুক্তিভিত্তিক উপদেষ্টা ও পরামর্শক নিয়োগ-সংক্রান্ত বিআরপিডি সার্কুলার নং-২৭-এর ৩.১ নং নির্দেশনা ভঙ্গ করেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য অনাপত্তি দিয়ে নিজেদের তৈরি করা নির্দেশনা নিজেরা ভঙ্গ করল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক উপদেষ্টা ও পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কোনো সাবেক পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্য কোনো কর্মকর্তা অবসর বা অব্যাহতি বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত একই ব্যাংকের উপদেষ্টা বা পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের নির্দেশনা ভঙ্গ করে কীভাবে উপদেষ্টা নিয়োগের অনাপত্তি দিয়েছেÑজানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার

 বিজকে বলেন, সম্প্রতি আইএফআইসি ব্যাংক বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগে ব্যাংকটির তাকে প্রয়োজন। এজন্য তাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিশেষ অনুমোদন চেয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় উপদেষ্টা

হিসেবে নিয়োগের জন্য অনুমোদন দিয়েছে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজেদের নিয়মের পরিপন্থি কোনো বিষয়ে অনাপত্তি না দেয়ার বিষয়ে মতামত দেন ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ম করেছে, তাই তারাই যদি সেই নিয়মের পরিপন্থি বিষয়ে অনাপত্তি দেয়, তাহলে বিষয়টি দৃষ্টিকটু লাগে। এভাবে ব্যাংক খাত কখনও ঠিক হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন অবসরে যাওয়ায় তাকে ওই ব্যাংকের উপদেষ্টা বা অন্য কোনো পদে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে ব্যাংকটি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ২০২১ সালের চুক্তিভিত্তিক উপদেষ্টা ও পরামর্শক নিয়োগ-সংক্রান্ত বিআরপিডি সার্কুলার নং ২৭-এর ৩.১ নং নির্দেশনা পরিপালন করতে ব্যাংকটিকে নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘কেউ বিশেষ প্রয়োজনে কোনো অনুমোদন চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিবেচনা করবে। ন্যাশনাল ব্যাংকের আবেদন যুক্তিযুক্ত না হওয়ায় ওই ব্যাংকের এমডিকে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি।’

প্রসঙ্গত, দেশে-বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে কাজ করা শাহ আলম সারওয়ার ২০০৫ সালে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি হিসেবে শীর্ষ পদে কাজ শুরু করেন। এরপর একে একে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি ২০১১-২০ সাল পর্যন্ত সরকার মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।