নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন আসামিরা। ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা এ মামলার আসামি এমএ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরী গতকাল বুধবার পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আত্মপক্ষ সমর্থনকালে তারা এ দাবি করেন।
ট্রাইব্যুনালে গতকাল এমএ রউফ চৌধুরী আত্মপক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি নিজেই সাফাই সাক্ষী প্রদান করেন। মামলা সংশ্লিষ্ট অপরাধের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন দাবি করে রউফ চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি শুধু প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু কোনো ধরনের শেয়ার কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য শেষ করার পর বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান তাকে জেরা করেন। এ মামলার অপর আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরীও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তার পক্ষে সাফাই সাক্ষী প্রদানের জন্য আগামী ২১ মার্চ দিন ধার্য করেছেন বিশেষ ট্রাইব–্যনালের বিচারক আকবর আলী শেখ।
এর আগে ১৮ জানুয়ারি এ মামলার ৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ডিএসইর মহাব্যবস্থাপক রুহুল খালেক, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন ও বিএসইসির সহকারী পরিচালক এনামুল হককে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। আর ১ মার্চ অপর সাক্ষী মনিরউদ্দিন আহমেদকে জেরা করা হয়।
এদিকে একই মামলায় আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এ আসামিদের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। যা আগামী ২ মে পর্যন্ত কার্যকরী থাকবে।
আসামিদের এই মামলায় দুই দফায় ৬ মাস করে এক বছরের স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত। প্রথমবার ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল এ বিচারকাজে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে ২৯ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন আদালত।
এ মামলার আসামিরা হলেন: প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের তৎকালীন চেয়ারম্যান এমএ রউফ চৌধুরী, পরিচালক সাঈদ এইচ চৌধুরী ও আনু জায়গীরদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান।
জানতে চাইলে বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, ‘প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের মামলায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিল। আসামি এমএ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরী ট্রাইব–্যনালে হাজির হয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময় তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময় মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে।
একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যমে ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল এক লাখ এক হাজার ৫০০টি। এ সব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করতো। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ লঙ্ঘন হয়েছে।
এ সময় এক নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময় ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের এক লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।