নির্দোষ আরমানকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাবন্দি পল্লবীর বেনারসির কারিগর মো. আরমানকে এখনই মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজি) ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্দেশ প্রতিপালনের হলফনামা দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আরমানের আটকাদেশ অবৈধ এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি ঘোষণা করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। রায়ে আরমানকে গ্রেপ্তার এবং তার জেল খাটার ঘটনায় চার পুলিশ কর্মকর্তার দায় নিরূপণ এবং দায় থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজিকে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। খবর: বিডিনিউজ২৪।

ওই চার পুলিশ কর্মকর্তা হলেনÑপল্লবী থানার সাবেক ওসি দাদন ফকির, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম ও মো. রাসেল। তাদের বর্তমান দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে ‘ক্লোজ’ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত রাখতে।

আদালতে এ মামলায় শুনানি করেন আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির পল্লব। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোজাম্মেল হক ও মাজেদুল কাদের। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী। রায়ের পর আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, ‘আরমানকে এখনই মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার পাশাপাশি তৎকালীন চার পুলিশ কর্মকর্তার দায় নিরূপণে তদন্ত কমিটিকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ভুক্তোভোগী আরমান, আরমানের পরিবার এবং অভিযোগ ওঠা পুলিশ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি নিয়ে তদন্ত করবেন।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় চার পুলিশ কর্মকর্তার দায় থাকলে সে দায় গোটা পুলিশ বিভাগের ওপর বর্তায় না। ফলে রায়ে আরমানকে ক্ষতিপূরণ দিতে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, শুধু সে অংশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’

‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে গত বছর ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, অপরাধী না হয়েও পাটকল শ্রমিক জাহালমকে জালিয়াতির ৩৩ মামলার আসামি হয়ে তিন বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল। অনেক ঘাটের জল পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হন। এর রেশ না কাটতেই আরেক জাহালম কাণ্ড বেরিয়ে এসেছে।

জানা গেছে, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তিন বছর ধরে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিচয়ে, তার পরিবর্তে সাজা ভোগ করছেন আরমান। শুধু বাবার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। অন্যদিকে প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকালে আরমানকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ। এর তিন দিন পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেই থেকে তিনি কারান্তরীণ।

এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে গত বছর ২১ এপ্রিল আদালতে রিট আবেদন করা হয়। সেখানে আরমানের আটকাদেশ চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি তার জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পল্লবীর বেনারসির কারিগর মো. আরমানকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি, তা নিশ্চিত করতে কেন তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

সেই সঙ্গে আরমানের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং কেন তাকে মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। জারি করা এ রুল যথাযথ ঘোষণা করে গতকাল রায় দিলেন উচ্চ আদালত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০