Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:44 am

নির্ধারিত দামে ভোগ্যপণ্য বিক্রি নিশ্চিত করুন

সরকার-নির্ধারিত দরে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের বিক্রি নিশ্চিত করা গেলে ভোক্তাদের দুর্ভোগ কমবে বলেই ধারণা। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাজার কারসাজিতে ব্যবসায়ীরাই জড়িত থাকেন। যতবারই বাজারে নৈরাজ্য চলেছে, প্রতিবারই কোনো কোনো ব্যবসায়ীর সংশ্লেষ ছিল।

বৃহস্পতিবার দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাণিজ্য ও শিল্প সমিতির নেতারা সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সরকার-নির্ধারিত দরে পাইকারি বাজারে সয়াবিন ও পামতেল বেচাকেনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি (তিনি খাতুনগঞ্জ বাণিজ্য ও শিল্প সমিতিরও সভাপতি) ব্যবসায়ীদের বলেন, ‘সরকার-নির্ধারিত দরেই কারখানা থেকে ভোজ্যতেল কিনুন। বিক্রির সময়ও সরকার-নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করবেন না।’

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতির আহ্বান সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। খাতুনগঞ্জে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে ঠিক থাকে, সেজন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। সরকার-নির্ধারিত দরের বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করায় গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারটিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এক ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী নেতার আহ্বান বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত ব্যবসায়ীরা দণ্ডিত হলেই তাদের পক্ষ নেন নেতারা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দাবি আদায় করে নেন তারা। ব্যবসায়ীরা অবশ্যই ব্যবসা করবেন, কিন্তু পণ্য মজুত করে কোনো ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সুযোগ নিতে না পারেন, সেজন্য সম্প্রতি একটি টাস্কফোর্স গঠন করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। টাস্কফোর্স গঠিত হলেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা হয়রানির শিকার হবেন, তা যেন না হয়। সরবরাহ উৎস, মজুত প্রভৃতিও তদারকি করতে হবে। সরকার-নির্ধারিত দামে কেনাবেচা নিশ্চিত করতে শুধু বাজার নজরদারি করলেই সুফল মিলবে না। পণ্য পরিবহনকালে পথিমধ্যে চাঁদাবাজি কিংবা পুলিশের হয়রানিও হয়ে থাকে। মুনাফা ঠিক রাখতে পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। তাই পণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনের সব কার্যকারণ খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে নিন্ম ও নিন্ম মধ্যবিত্ত তো কষ্টে আছেই, মধ্যবিত্ত পরিবারও নিদারুণ কষ্টে আছে। বাজার পর্যবেক্ষক ও ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠনগুলোর তদারকি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বড়-ছোট সব বাজার ও দোকানে পণ্যের মূল্যতালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। এর আগে যেসব কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছিল, সেসব কারণ চিহ্নিত করে বিষয়গুলোর ওপর কঠোরভাবে নজরদারি, দায়ীদের দ্রুত জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারলে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। অবৈধভাবে মজুতদারদের সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নিয়মিত তদারকি এবং প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।

নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুত গড়ে তুলে প্রয়োজনীয় সময়ে ভোক্তাসাধারণের কাছে সরবরাহ করার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখা রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক সংস্থা টিসিবির কাজ। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জনগণের স্বার্থেই টিসিবিকে এগিয়ে আসতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, টিসিবির সাশ্রয়ী দামের পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি এ দায়িত্ব কতটা পালন করছে, সেটিও বিবেচনায় নেয়া জরুরি।