কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়ক

নির্ধারিত সময়ে আলোর মুখ দেখছে না চার লেন প্রকল্প

আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: যথাসময়ে আলোর মুখ দেখছে না নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের অনিয়ম ও দুর্নীতিরও। সূত্র বলছে, এ সড়কের কাজে অংশ নেওয়া ঠিকাদাররাই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। একটি কাজে হাত দিয়ে তা শেষ না হতেই আরেকটি কাজের কার্যাদেশের জন্য মরিয়া থাকেন অন্য বিভাগে। ফলে যথাযথ নির্মাণসামগ্রী, শ্রমিক সংকট ও মর্জিমাফিক চলার কারণে যথাসময়ে সেসব কার্যাদেশ সম্পন্ন করা এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে ও খবর নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়কটির চার লেনের উন্নয়ন কাজ প্রায় দু’বছরেও শেষ হচ্ছে না। কার্যত, উন্নয়নের নামে সড়কের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখা হয়েছে, যা নাগরিকদের দৈনন্দিন চলার পথে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে যথাসময়ে প্রকল্পভুক্ত কুমিল্লা বিশ্বরোড়ের পদুয়া বাজার থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত প্রায় ৫৭ কিলোমিটার কয়েকটি প্যাকেজের বেহাল সড়ক অতিক্রম করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক মানুষ। তবুও সড়ক নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টনক নড়েনি।

যানবাহন শ্রমিকরা বলছেন, আগে অবস্থা অনেক ভালো ছিল। সড়কটির বিভিন্ন স্টেশনে চার লেনে উন্নীত করতে গিয়ে আতঙ্কে বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা রাস্তায় উঠতে পারছে না। অনেকেই দুঃখ করে বলছেন, ‘সড়কের দুর্ভোগ আর কতকাল?’ স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়ক নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে। আবার প্রায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ নিয়ে অন্যত্র সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েও প্রকল্পের কার্যাদেশকে বেহাল করেছেন। নোয়াখালীর সিএনজি মালিক, শ্রমিক ও চালক সমিতির নেতারা কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃপক্ষকে বারবারই অনুরোধ করলেও নিষ্কৃতি মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন।

তাদের মতে, বিগত চার মাস লকডাউন চলাকালীন কাজ করলে সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যেত। তা না করে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে একদিকে যানবাহন চলাচল, অন্যদিকে মানব চলাচলের দৃশ্য যেন এক করুন অবস্থা। বিশেষ করে সড়কের কুমিল্লা দক্ষিণ সদর, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, সোনাইমুড়ি, বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলার মধ্যকার সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহন চলাচলের অবস্থা খুবই নাজুক। কখন যানবাহন উল্টে মানুষের প্রাণ যাবে তা নিয়ে ভয়ে থাকেন সবাই।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সড়ক উন্নয়নকাজে নিযুক্ত ঠিকাদার আংশিক কাজ সম্পন্ন করে বাকি অংশ খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে সড়ক উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়।

সোনাপুর থেকে আসা একুশে বাসের চালক নুর নবী বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানো কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি নিয়ে মহাদুর্ভোগে রয়েছি। আর কতদিন এভাবে কষ্ট করব, তাও জানি না।’

ঢাকা-নোয়াখালী সড়কে চলাচলরত একুশে পরিবহন, হিমাচল সার্ভিসহ কয়েকটি বাসের অন্তত সাত-আটজন চালকের সঙ্গে হলে তারা জানান, এ সড়কের যেসব অংশে বেশি ভাঙা, সেখানে এলে যাত্রীরা ঝাঁকুনির ভয়ে বাস থেকে নেমে যেতে চান। এছাড়া বড় গর্তগুলোয় আটকে অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে যায়। তখন যাত্রীরা তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে নোয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, ‘সড়কের বিভিন্ন স্থানে জমি অধিগ্রহণ, দখল, বেদখল ও বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে গিয়ে নির্মাণকাজের গতি কমেছে। এখন দিন-রাত কাজ চলছে। যে কারণে যানবাহন চলাচলে একটু বিঘœ সৃষ্টি হলেও করার কিছুই নেই, কাজ শেষ করতে হবে। তা না হলে যাত্রীদের আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সড়ক উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে কথা বলতে ঠিকাদারদের কয়েকজনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, নোয়াখালীর একটি জাতীয় সড়ক, চারটি আঞ্চলিক, ২৩টি মহাসড়ক, ১৯৫টি কালভার্ট নির্মাণ, সংস্কার ও সরবরাহের নামে বিগত সময়ে নোয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পালসহ অন্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে কালার গ্রাফিক্স ও কম্পিউটারের মালিক ঠিকাদার মনির হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবরে অভিযোগ করেন

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০