নির্ধারিত সময়ে এজিএম করছে না কোম্পানিগুলো: দুর্ভোগে বিনিয়োগকারীরা

নিয়াজ মাহমুদ: পরিচালনা পর্ষদের অনাগ্রহের কারণে নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। ৩১ ডিসেম্বর হিসাববছর শেষ হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছয় মাস সময়ের মধ্যে এজিএম করতে পারেনি অন্তত ২৮ কোম্পানি। ঘোষিত লভ্যাংশ এজিএমে অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তা বিতরণ করা যায় না। এর ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার বিনিয়োগকারীরা। লভ্যাংশের অর্থ বা শেয়ারের জন্য তাদের দীর্ঘ প্রতিক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

সিকিউরিটিজ আইনে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক বছর শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এজিএম সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমতি সাপেক্ষে তা পরে অনুষ্ঠানের সুযোগও আছে। আর এ সুযোগের অপব্যবহার করছে অনেক কোম্পানি। তারা হিসাববছর শেষ হওয়ার ছয় থেকে আট মাস পর এজিএম করছে।

জানা গেছে, ৩১ ডিসেম্বর হিসাববছর শেষ হওয়া তালিকাভুক্ত মোট কোম্পানি শতাধিক। এর মধ্যে ছয় মাসের মধ্যে এজিএম সম্পন্ন করতে পারেনি অন্তত ২৮টি কোম্পানি। এর মধ্যে সাতটি ব্যাংক এখনও এজিএম করতে পারেনি। এগুলো হলো-এনসিসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। আর চারটি ব্যাংক চলতি জুলাই মাসে (ছয় মাস অতিক্রম হওয়ার পর) এজিএম করেছে। এ তালিকায় রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড।

নির্ধারিত সময় এজিএম করতে পারেনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ ফাইন্যান্স কোম্পানি। এ ছাড়া বিমা খাতের ১১টি কোম্পানি এখনও এজিএম করতে পারেনি। চলতি ও আগামী মাসের মধ্যে কোম্পানিগুলো এজিএম করবে বলে জানা গেছে। কোম্পানিগুলো হলো- প্রভাতীইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলাসিক ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

তালিকাভুক্ত তিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হিসাববছরও শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী ছয় মাস পেড়িয়ে গেলেও এখনও এজিএম করতে পারেনি লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ ও ম্যারিকো বাংলাদেশ। বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ ও ম্যারিকোর এজিএম অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ১৬ ও ১৭ জুলাই। তবে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট এখনও এজিএমের তারিখ ঘোষণা করেনি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলো ইচ্ছা করেই এজিএম নিয়ে কালক্ষেপণ করছে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা বেশি সময় পদে থাকতে কালক্ষেপণ করছে। এর ফলে পর্ষদ লাভবান হলেও বিনিয়োগকারীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর না হওয়ায় কোম্পানিগুলো তাদের খেয়াল-খুশিমতো এজিএম করছে। এতে বিনিয়োগকারীরা সঠিক সময়ে ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মডার্ন সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মো. হানিফ বেপারি শেয়ার বিজকে বলেন, হিসাববছর শেষ হওয়ার দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এজিএম করা সম্ভব। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ব্যবস্থাপকদের স্বেচ্ছাচারিতায় অনাকাক্সিক্ষত কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমেও তারা সুবিধা ভোগ করছে। অপরদিকে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

নির্ধারিত সময়ে এজিএম করতে না পারা কয়েকটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা রমজান ও ঈদের কারণে এজিএম বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান। নির্ধারিত সময় এজিএম না করাকে তারা কোম্পানির  ব্যর্থতা বলতে নারাজ।  নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিকট আবেদন করে সময় বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান দেশের বাইরে থাকায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংস্থাটির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, যেসব তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসাববছর শেষের ছয় মাসের মধ্যে এজিএম করতে ব্যর্থ হবে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যর্থ কোম্পানিকে ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হবে। এ ছাড়া জরিমানা আরোপসহ অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তিনি।

এদিকে কোম্পানির আর্থিক তথ্য প্রকাশে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পৃথক নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত জীবন বীমা কোম্পানি ছাড়া অন্যান্য কোম্পানিকে তাদের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রান্তিক শেষ হওয়ার ৪৫ দিন এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হবে। আর জীবন বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন ৯০ দিন এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হবে। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ক্ষেত্রে সময় বাড়াতে পারে বিএসইসি।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০