রোহান রাজিব: বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগের মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরে ব্যাংকের বাইরে টাকা বেড়েছিল। ওই মাসে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের বাইরে বেড়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। নির্বাচনে খরচের জন্য কেউ কেউ টাকা তুলে রেখেছিলেন। আবার নানা অনিশ্চয়তার কারণে একশ্রেণির গ্রাহকও টাকা তুলে নিয়েছেন। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও শীতের মৌসুমে পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণেও ব্যাংক থেকে টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বরে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়েছিল ৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।
গত বছরের নভেম্বরেও ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বেড়েছিল। অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে বেড়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে টাকা থাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে গত জুনের পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যুকৃত নোটের পরিমাণ কমে আসছিল। কিন্তু অক্টোবরে এসে ছন্দপতন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অক্টোবর শেষে বাজারে ইস্যুকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা ছিল ব্যাংক খাতের বাইরে। এর পর থেকে ইস্যুকৃত নোট ও ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যুকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকায়।
জানা যায়, গত বছরের জুনে উচ্চমূল্যস্ফীতি ও কিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের খবর প্রকাশ পেলে ব্যাংকের বাইরে হঠাৎ টাকা বেড়ে যায়। জুনেই বেড়েছিল ৩৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। এর আগে মে মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। জুনে তা হয় ২ লাখ ৯১ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। তবে এরপর টানা চার মাস কমেছিল। অবশ্য নির্বাচনের দুই মাস আগে তা আবার বাড়তে শুরু করে।
ব্যাংকাররা জানান, নয়-ছয় হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সুদের হারের সীমা তুলে দেয়ার পর ঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ঋণের সুদহার আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে ১২ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সমানতালে বেড়েছে আমানতের সুদহারও। কোনো কোনো ব্যাংক ৯ শতাংশের বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এসব পদক্ষেপের ফলে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছিল। তবে নির্বাচনের আগে মানুষ তার ব্যাংকে থাকা অর্থের খোঁজখবর নেন। অনেকে নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে তা তুলে ঘরে রাখেন। তার কারণে ওই দুই মাসে টাকা বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ বাড়লেও ডিসেম্বরে আমানতের তুলনায় ঋণ বেড়েছে বেশি। ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোয় আমানত বাড়ে প্রায় ১৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। ওই মাসে ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে যা বেড়ে হয় ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকগুলোয় তারল্যসংকট তৈরি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, কিছু ব্যাংকের অনিয়মের কারণে মানুষ আস্থাহীনতায় ভুগছেন। তাই নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তার কারণে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রেখেছেন। ফলে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক তাই আবার সে টাকা ফিরতে শুরু করেছে।