Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 4:47 pm

নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমছে না: অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হচ্ছে না। সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হবে’ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে এ তথ্য জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদহার সমন্বয়ের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি দু’মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তবে আগামী নির্বাচনের পর ওই কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য বাধ্যতামূলক ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে অটোমেশন কার্যক্রম শুরু হলে ব্যাংক হিসাব না থাকলে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না; একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে চেকের মাধ্যমে লেনদেন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।’
সঞ্চয়পত্রের সুদহার ব্যাংকের চেয়ে বেশি হওয়ায় মানুষ এর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কারণে বিনিয়োগ করতে পারছে না। তারল্য প্রবাহ বাড়াতে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। এদিকে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেন। পরে আমানত ও ঋণের সুদহার যথাক্রমে ছয় ও ৯ শতাংশ করার ঘোষণা দেয় ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। তারপরও বেসরকারি ব্যাংক আশানুরূপ আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের হিসাবে, বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়। আর পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। একইভাবে তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শামসুন্নাহার বেগমসহ সংশ্লিষ্ট সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর
আগের অর্থবছরে ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ গত
দুবছরে এক লাখ ৫৩ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ সময় সঞ্চয়পত্রের
মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধে ৩২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মুনাফাই পরিশোধ হয়েছে ২০ হাজার দুই কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। যা ঘাটতি বাজেট অর্থায়নে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা (সংশোধিত) থেকেও দুই হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি।
গ্রাহকের কাছে অর্থের উৎস জানতে না চাওয়া ও সঞ্চয়পত্রের সুদহার যে কোনো আমানতের সুদহারের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। বেসরকারি ব্যাংকগুলো তিন মাস মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ছয় শতাংশ নির্ধারণের পর সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে। অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্র কিনে রাখছেন। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে প্রায় দুই কোটি গ্রাহক রয়েছেন।