নিজস্ব প্রতিবেদক: সাধারণ মানুষ একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চায়। কিন্তু এটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন হয়তো হয়ে যাবে, কিন্তু এরপর কী হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।
গতকাল শনিবার সকালে ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পরিবেশ: প্রত্যাশা, বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ওয়াইডব্লিউসিএ ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা একটা ইউনিক নির্বাচন দেখতে পাচ্ছি। যেমন খুশি তেমন নির্বাচন আরকি। আমরা এখন ঘোরতর সংকটে আছি।
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন হয়তো করে ফেলবে, কিন্তু নির্বাচনের পর কী হবে, এটি নিয়ে আমি সন্দিহান।
গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যারা কথা বলতেন না, এখন তারাও কথা বলছেনÑউল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি ঘর থেকে বের হলেই মানুষ আমাকে প্রশ্ন করে, ভোট দিতে পারি না, কী করব? আমি বলি, আল্লাহ আল্লাহ করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। এখন বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে। তারাও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের বসার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীরা চাইলেও নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ তাদের সব নেতাই এখন জেলে। ইতোমধ্যে অনেকেই সাজা পেয়েছেন, আরও অনেকে পাবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একতরফা নির্বাচনই নিয়তি।
বেসরকারি সংগঠন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ বলেন, ‘আমরা
একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। এর থেকে আমাদের বের হতে হবে। বের হওয়ার জন্য আমরা নাগরিক সমাজ কী করতে পারি, সেটির ওপরই নির্ভর করবে জাতির অস্তিত্ব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম লাইন হচ্ছে ‘গভর্নমেন্ট বাই দ্য ডিসকাশন’। তাই সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপের সময় শেষ হওয়া মানে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটা। হতাশ হলে হবে না।
লিখিত প্রবন্ধে ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা প্রকল্পের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আকাক্সক্ষা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। কিন্তু পূর্বাভাস বলছে, আমরা একটি একতরফা ও সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি সমঝোতা না হয়, তবে সামনের দিনগুলোয় জাতিগতভাবে আমরা চরম সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হতে পারি, দেশ চলে যেতে পারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে, যা কারোরই কাম্য নয়।’