Print Date & Time : 1 July 2025 Tuesday 5:47 am

নির্বাচনের বছরে সামাজিক সুবিধাভোগীর বড় সম্প্রসারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন আট লাখ ব্যক্তিকে সুবিধার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। উপবৃত্তি, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী চিকিৎসা, বেদে সম্প্রদায়সহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে এ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৭৫ লাখ। নতুন বাজেটে আরও সাড়ে ১০ লাখ মানুষকে এ সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। গ্রামের ক্লাবগুলোর জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী বছরে ভোটার আকর্ষণে এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। অথচ মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশই ব্যয় হবে সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরোত্তর পেনশনে।
চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ রয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এতে ১০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সরকারি হিসাবেই এ খাতের মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ বা ২৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে অবসরোত্তর প্রায় আট লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন বাবদ। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশনকেও রাখা হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা খাতে।
এ হিসাবে অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ অর্থ বা ৩৫ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে বাকি ৭৮ লাখ মানুষের পেছনে। অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বাজেট বক্তব্যে বলা হয়, আগামী বাজেটে মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা অথবা নাতি-নাতনিদের জন্য সহায়তা বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। বয়স্ক ভাতাগ্রহীতাদের সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা হবে। বিধবা ও স্বামী-নির্যাতিত মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ১৪ লাখে বৃদ্ধি করার চিন্তা করছে সরকার।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবসে পাঁচ হাজার টাকা করে বিশেষ সম্মানী ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাগ্রহীতা আট লাখ ২৫ হাজার থেকে ১০ লাখে বৃদ্ধি করা হবে। প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা প্রাথমিক স্তরে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮৫০ টাকায় উন্নীত করা হবে। একইসঙ্গে ভাতাগ্রহীতার সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজারে উন্নীত করা হবে।
হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ খাতে প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং উচ্চতর স্তরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বাড়ানো হচ্ছে। বেদে ও অনগ্রসর সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩৬ থেকে ৬৪ হাজারে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী বাজেটে। পাশাপাশি বিশেষ ভাতাভোগী, চিকৎসা বাবদ সুবিধা নেওয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে চা শ্রমিক, দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভিজিডি সুবিধাভোগীরা সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাতার পরিমাণও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।