নিজস্ব প্রতিবেদক:বিএনপিকে উদ্দেশ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যদি আপনাদের এতই মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের একেবারে গাছে উঠিয়ে সরকার বানিয়ে দেবে। তাহলে আপনাদের চ্যালেঞ্জ দিলাম আপনারা নির্বাচনে আসুন। আপনারা যদি জয়লাভ করেন আমাদের আপত্তি নেই। তিনি বলেন, তবে আমি জানি বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ভোট দেবে না। তারা সবসময় সঠিকভাবে ভোট দিতে শিখেছে। আপনাদের মতো ভোটবিহীন নির্বাচন, হ্যাঁ-না ভোট, ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট কী করেছেন আমরা ভুলিনি। সেজন্যই আপনাদের আন্দোলনে বাতাস নেই, আন্দোলনে মানুষ সম্পৃক্ত হয় না।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা দিবসে শহিদদের স্মরণে’ শীর্ষক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, যারা পাকিস্তান গোষ্ঠীর দালাল ছিল, তারা এখন মুসলিম লীগের শেরওয়ানি ছেড়ে বিএনপির কাপড় পরা শুরু করেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর শত্রু ছিল, এখনও আছে। তারা কিছু কুলাঙ্গার ও মীরজাফরের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটায়। তারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে চিরতরে নির্মূল করতে চেয়েছিল। সেই ১৯৭৫ সালের অসমাপ্ত ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণ করতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটায়। তবে সেখানেও তারা ব্যর্থ হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, সেসময় সরকারে ছিল বিএনপি। সেদিনের সেই আক্রমণে সেখানে ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় একটা মামলা হয় আর সরকারিভাবে আরেকটি তদন্ত হয়। যেখানে একজন বিচারপতিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেছিলেন, এখানে ভারত সরকারের হাত আছে। আর মামলার বাদী ছিলেন শরিফ ফারুক আহমেদ, এফআইআরে জর্জ মিয়ার নাটক সাজানো হলো। মামলার সুষ্ঠু চেষ্টা তারা করেননি, কারণ এতে তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া জড়িয়ে যাবে। তাই তারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল।
আনিসুল হক বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, গ্রেনেড হামলায় জোর করে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলামের অভ্যাস মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা বলতে বলতে কোন পর্যায়ের মিথ্যা বলেন, তিনি নিজেও ভুলে গেছেন। তিনি মূর্খের মতো মিথ্যুক। একজন বুদ্ধিমান মিথ্যুক মিথ্যা বললে ধরতে দেরি লাগে, আর আহাম্মকের মতো মিথ্যুক হলে মিথ্যা বলার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যায়। তিনি আহাম্মকের মতো মিথ্যুক, তার কারণ তিনি তথ্য না জেনেই কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আমি জেনেই কথাগুলো বলছি। তিনি (ফখরুল) ভুলে গেছেন, মুফতি হান্নানকে কয়েক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। একপর্যায়ে মুফতি হান্নান বলল, দেখেন আমাকে তো ফাঁসিই দিয়ে দেবেন, কিছু সত্য কথা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বলব। তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে জবানবন্দিতে বলে গেছেন তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের ষড়যন্ত্রের কথা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং হত্যার ষড়যন্ত্রের আসল নায়ক কে। মির্জা ফখরুলকে বলব, তথ্য জেনে কথা বলুন। তাহলে এত মিথ্যাবাদী হবেন না। যেটা জানেন না, সেটা বলবেন না।
তিনি বলেন, বিএনপি দেশকে যে উপহার দিয়েছে সেগুলো হলো, ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি আইন, এরকম কালো আইন কোথাও নেই। ৩ নভেম্বরের জেলহত্যা, সাড়ে চার হাজার সামরিক অফিসারকে ক্যুয়ের অপরাধে হত্যা। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দূতাবাসে চাকরি দিলেন, তারা বিচার না হওয়ার ব্যবস্থা করলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যা মামলা, ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ও পরিকল্পনা, রমনা বটমূল হত্যাকাণ্ড, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র পাওয়া ও বগুড়ায় অস্ত্র মামলা।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে তাদের অধিকার দিয়েছিলেন। তিনি কখনও বলেননি আমি বসে থাকি, তোমরা পথে নামো। তিনি বলেছেন, আমি পথে নামি তোমরা আমার সঙ্গে আসো। আগরতলা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন, ১৩ বছর জেল খেটেছেন। সত্যিকারের বাংলার বন্ধু ছিলেন বলেই তিনি বঙ্গবন্ধু।
এ সময় ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে শেখ হাসিনার পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা যদি থাকে পদ্মা সেতুর মতো উন্নয়ন বাংলাদেশে হতেই থাকবে। আমরা শোকে মুহ্যমান, তবে শোককে শক্তিতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।