নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল নির্বাচন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা তার দলই এনেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকায় ক্ষমতায় থাকতে তাদের ভোট চুরি করতে হয় না।
গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা সারাদেশ থেকে এসে জড়ো হন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসনামলে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন মানেই ছিল, আমরা যেটা বলতামÑ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা।’
খালেদা জিয়ার শাসনকালে ‘এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার’ তৈরির কথাও বলেন তিনি।
সেই অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগই গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করেছে বলে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট দেয়ার যে সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। অনেকে অনেক কথা বলে, কিন্তু আমরা সেটা করেছি।’
নির্বাচন সংস্কারে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও মহাজোটের প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি এক্ষেত্রে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবদানের কথাও স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘যাতে কেউ ভুয়া ভোট দিতে না পারে, সেজন্য ছবিসহ ভোটার তালিকা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর যে কাজই করুক, আমাদের জেল খাটাক, যা-ই করুক, তারা অন্তত সেই প্রস্তাবের কিছু কাজ বাস্তবায়ন করে গেছে।’
এরপর আওয়ামী লীগের শাসনকালে নেয়া আরও নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ওই সিল মেরে আগেই ব্যালট বাক্স ভরবে, সেটা যেন না পারে, যে কেউ ভোট দিতে গিয়ে যেন দেখতে পারে সেখানে আগে থেকে ভোট ভরা আছে কি না, সেজন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এখন চালু করা হয়েছে।’
ইভিএম চালুর প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে কারচুপি করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা জানি না।
নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়টি তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই আইন মোতাবেকই মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করছেন। সেখানে আমরা আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। আগে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সক্ষমতা নিজস্ব ছিল না, সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এটা রাখা ছিল। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এই আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি। বাজেট থেকে সরাসরি তাদের টাকা দেয়া হয়।’
নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকত, তাহলে খালেদা জিয়ার মতো ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতাম। তা তো আমরা করিনি। আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। আমরা সেই বিশ্বাস নিয়েই চলি।’
দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আর আমি চার-চারবার প্রধানমন্ত্রী। আমাদের পরিবার দুর্নীতিই যদি করত, তাহলে আর দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি। মানুষের জন্য করতে এসেছি। এ কারণেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেÑএটা অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে মেনে নিতে পারি না।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শুধু পদ্মা সেতু নয়, আজকে তিনটা এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের আওয়ামী লীগ সরকারের করা। চতুর্থটা হচ্ছে কক্সবাজার। সারাদেশে রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ করে, কিছুদিন আগে ১০০টা সেতু, ১০০টা সড়কের উন্নতি। এটা আমরা করতে পেরেছি।’

জনগণের কল্যাণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে একটা দেশকে উন্নত করতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে। আমরা সেভাবেই এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
জাতির পিতাকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস, বাংলাদেশের মানুষ যেদিন পেট ভরে খেতে পাবে, যেদিন প্রত্যেকের মুখে হাসি ফুটবে, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম সেদিনই ক্ষান্ত হবে। আজকে আওয়ামী লীগ এটুকু বলতে পারে, বাংলাদেশের কোনো মানুষ অভুক্ত থাকে না। তাই পিতাকে বলতে পারিÑপিতা, আমরা কথা দিলাম, আপনার জনগণ কখনও অভুক্ত থাকবে না, আপনার জনগণ কষ্টে থাকবে না। আপনি আজকে নেই, আপনার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়ে জনগণের পাশে থেকে আমরা এই জনগণকে সুন্দর জীবন দেব, উন্নত জীবন দেব।’
কোনো ষড়যন্ত্রই এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না বলে আশা রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঘাত আসবে, ষড়যন্ত্র আসবে, কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবেন, সেটাই আমরা চাই। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাল্লাহ আমরা পূরণ করব।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে বেশি ভুগতে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে এই সংঘাত বন্ধের ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, একটা বাধা করোনা আর যুদ্ধ। এজন্য আমার আহ্বানÑআমরা যুদ্ধ চাই না, স্যাংশন চাই না, ওগুলো বন্ধ করেন।’