শেয়ার বিজ ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদের বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব যাতে হঠাৎ এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়Ñআমরা কখন যাব। জনগণ যখন বলবে, আমরা চলে যাব।
তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব। ড. ইউনূস আরও বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে, আমরা অবশ্যই তা করব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ঘেরাও করে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। সবাই মিলে তাদের বোঝানÑতারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন। ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
জনগণের উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে, এর জবাব আপনাদের হাতে। জনগণ এটা নির্ধারণ করবে। আমরা আমাদের দিক থেকে সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেব না। তিনি বলেন, কখন নির্বাচন হবে এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করি। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করবে।
তিনি বলেন, কৃষির উন্নয়নে কাজ করবে সরকার। কৃষক যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পান তা নিশ্চিতে কাজ করবে সরকার। তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলন হয়েছে তার অংশীদার আমিও। আমি চাই সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হোক। এ আন্দোলনে আপনারাও অংশ নিন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তরুণ প্রজš§, শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সফল আমাদের হতেই হবে। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য একটাইÑউদার, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার। আমরা এক পরিবার, আমাদের একটাই লক্ষ্য। কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে লক্ষ্যভ্রষ্ট না করতে পারে।’ রাববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কমানা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলব, আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
এখনই সব দাবি পূরণের জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মুখে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই এক ধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা, তা থেকে বের হতে হবে। না হলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের গৌরব ও সম্ভাবনা এসব কাজে ম্লান হয়ে যাবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাও এতে ব্যাহত হবে। রাতারাতি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘নড়বড়ে এক কাঠামো, আমি বলব, জনস্বার্থের বিপরীতে গঠিত এক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের দেশ সংস্কারের কাজে হাত দিতে হয়েছে। আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই, যেন এদেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস হয়। বিশ্বদরবারে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কাউকে মতের কারণে বা ধর্মের কারণে আমরা শত্রু মনে করব না, আমরা সবাই সমান। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলন হয়েছে তার অংশীদার আমিও। আমি চাই সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হোক। এ আন্দোলনে আপনারাও অংশ নিন।
নির্বাচনের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।