Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 12:52 am

নির্বাচন কমিশন একেবারে পঙ্গু অথর্ব ও দলদাস: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফার দ্বিতীয় পর্যায়ের পদযাত্রা কর্মসূচি। এটা শুধু পদযাত্রা নয়, জয়যাত্রা। আমাদের অধিকার আদায়ের পদযাত্রা এটি।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী মাজার রোড এলাকায় পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। কারণ গতকাল ঢাকায় উপনির্বাচন নিয়ে তামাশা করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচনে আরাফাত নামে আওয়ামী লীগের একজন হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। তিনি আবার আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাংকের প্রধান। প্রতিদ্বন্দ্বী কে? হিরো আলম। ওই নির্বাচনেও ভোটারদের নিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন একেবারে পঙ্গু, অথর্ব ও দলদাস। তাদের হিসাব অনুযায়ী মাত্র ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা টেলিভিশনে দেখলাম কোথাও ভোটার নেই। পাঁচ ঘণ্টা পর একটা ভোটার আসে, তাকে নিয়ে লাফালাফি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য একটাইÑজুলাইয়ের ১২ তারিখে এক দফার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শুধু আমরা নই, ৩৬টি রাজনৈতিক দল ঘোষণা দিয়েছে যে, সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। দেশের মানুষ তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ এক দফা দাবিতে গতকাল সকাল ১০টার পর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পদযাত্রা করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি আমান উল্লাহ আমান। সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব আমিনুল হক। এছাড়া বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

এদিকে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে শেষ হয়েছে বিএনপির পদযাত্রা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টাড গাবতলী থেকে বিএনপির এই পদযাত্রা শুরু হয়। মিছিলে মিছিলে এই পদযাত্রায় নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটারের এই পদযাত্রা রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ গোলচত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁওয়ের তালতলা, বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, এফডিসি গেট, মগবাজার, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ইত্তেফাক মোড় এবং দয়াগঞ্জ হয়ে রায় সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শেষ হয়।

এ সময় সরকারকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার এই রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার জন্য আমি বহু মিছিল করেছি। কিন্তু আজকে যে মিছিল হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না। আজকে এত বড় মিছিল হয়েছে যে, তা পুরো বিশ্বকে আবাক করে দিয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ শোভাযাত্রা করছে। কার জন্য কী জন্য করেছে, এটা তারা ভালো জানে। তারা শোভাযাত্রা করেছে আবার দেশটাকে লুটেপুটে খেতে। আজকে বাঙলা কলেজের সামনে যেভাবে দৌড়ানি খেয়েছে, তাদের শিক্ষা হয়েছে। যারা এটা করেছেন তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আইসিইউতে ভর্তি হয়েছে। হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। শেখ হাসিনাকে আমি বলব, সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন, ইনশাআল্লাহ।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার ভোট চোর। তার অধীনে নির্বাচন নয়। এই পুরান ঢাকার মানুষ ডেঙ্গু মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আওয়ামী লীগের মেয়র কোথায়? পরিবার নিয়ে বিদেশে ঘুরছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বিদেশে পালিয়েছেন। এই আন্দোলন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের আন্দোলন নয়, মানুষের বেঁচে থাকার আন্দোলন। আমি আজকে এই পুরান ঢাকাবাসীকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এই পুরান ঢাকায় শেখ হাসিনা বিএনপির সঙ্গে হেরেছে। আজকে ব্যবসার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। অথচ ব্যাংক চোর, শেয়ারবাজার লুটকারী ৫০ জন, তারা বলছেন তারা নাকি হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় চান। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারপর তারেক রহমান। আগামীকালও আমরা বিশাল পদযাত্রা করব।’

অন্যদিকে একই দাবিতে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশ করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশ শেষে তারা সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু করে জাতীয় প্রেস ক্লাবে পর্যন্ত পদযাত্রা করে। এছাড়া রাজধানীর বিজয়নগর মোড় থেকে বেলা ৩টায় পদযাত্রা করে ১২ দলীয় জোট।

বিএনপি জানিয়েছে, পদযাত্রাটি গাবতলী এলাকা থেকে শ্যামলী হয়ে আগারগাঁও, বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, এফডিসি, মগবাজার, মালিবাগ, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড় ও দয়াগঞ্জ হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।