Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:56 pm

নির্বাচন না হওয়ায় স্থবির যশোর চেম্বারের কার্যক্রম

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: স্থবির হয়ে পড়েছে যশোরে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যক্রম। নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর সরকারি কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের অন্যতম এ প্রতিষ্ঠানটির। কবে নির্বাচন হবে তাও জানা যায়নি। কয়েক দফা তফসিল ঘোষণার পরও হয়নি ভোট গ্রহণ। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধির হাতে যায়নি নেতৃত্ব। এজন্য ব্যবসায়ীদের ন্যয়সংগত অনেক দাবি উপেক্ষিত।

ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনারও কেউ নেই। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে যশোরের ব্যবসায়ীরা। এজন্য ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে তাদের মাঝে। এ পরিস্থিতিতে শিগগির নির্বাচনের আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক নেতারা।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বার অব কমার্সের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে যশোরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান খান সভাপতি হিসেবে ও বদরুজ্জামান বাবলু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বাধীন কমিটি নির্বাচিত কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। মূলত তখন থেকেই ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনের নির্বাচন নিয়ে শুরু হয় দীর্ঘ জটিলতা। পরে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের ও এফবিসিসিআইয়ের তৎকালীন সভাপতি এ. কে. আজাদের হস্তক্ষেপে প্রায় এক বছর পর ২০১২ সালের ৩ মার্চ নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়।

দায়িত্ব নিয়েই নতুন নির্বাচিত কমিটি চেম্বারকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নেয়। তারা চেম্বারের কার্যক্রম নতুন ভবনে শুরু করেন। অফিসের নানা অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ফান্ডে আগের কমিটির রেখে যাওয়া ১৮ হাজার টাকা একপর্যায়ে বেড়ে ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এর মাঝেই ক্ষমতাসীন দলের পরাজিত কয়েক জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে দুই বছরমেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হতে না হতেই বিধি অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ওই বছর ১২ জুলাই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করলেও ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা নির্বাচন বয়কট করে কমিটির কোষাধ্যক্ষ শামীম আহমেদকে অপদস্ত করেন। পরবর্তীকালে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান।

ব্যবসায়ীরা জানান, এরপর নির্বাচন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের মধ্যস্ততায় প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি। ওই সময় অতিরিক্ত ডিসি (সার্বিক) সাবিনা ইয়াসমিনকে প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরই মাঝে ২০১৫ সালের ১৬ মে যশোর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার কামরুল আরিফকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করে তফসিল ঘোষণা করলে আওয়ামী ঘরানার এক ব্যবসায়ীর মামলার কারণে নির্বাচন পুনরায় স্থগিত হয়। এরপর ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও মামলার কারণে তা ফের স্থগিত হয়ে যায়। এরপর

থেকে সরকারি পর্যায়ে প্রশাসক দিয়েই চলছে চেম্বারের কার্যক্রম।

এদিকে দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ সংগঠনটি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। এজন্য তারা শিগগির ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জোর দাবি তুলেছেন।

এ বিষয়ে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা জরুরি। বিষয়টি নিয়ে ডিসির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে তিনি জানান। ডিসি মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন।

তবে এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দাবি করেছেন সর্বশেষ বিদায়ী কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ আমাদের নেতৃত্বাধীন কমিটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব নিয়ে চেম্বার অব কমার্সকে একটি কার্যকর গতিশীল সংগঠনে রূপান্তরিত করেছিলাম। কিন্তু একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে আমরা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারিনি।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আজ প্রশাসক নিয়োগের কারণে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ভূলণ্ঠিত হচ্ছে। চেম্বার অব কমার্সের কত টাকা আয়-ব্যয় হচ্ছে তা কেউ জানেন না। সংবিধানের বাইরে ব্যয় করা হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী প্রশাসক রুটিন ওয়ার্ক করার কথা থাকলেও তিনি সব নিজেই করছেন। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কান্ট্রি অব অর্জিন নিতে খুলনায় যাচ্ছেন যশোরের ব্যবসায়ীরা।’

তিনি বলেন, ‘জেলা শহরে এখন প্রতি বছরই বাণিজ্য মেলা হয়। আমার প্রশ্ন, এতে ব্যবসায়ীদের কতটা লাভ হয়? আদৌ কি চেম্বার অব কমার্সকে এর সঙ্গে রাখা হয়? অথচ নিয়ম রয়েছে পুরোটাই চেম্বার অব কমার্সের নিয়ন্ত্রণে হতে হবে।’ তিনি আর কালক্ষেপণ না করে শিগগির ব্যবসায়ীদের ভোটের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানান।

একই কথা বলেন সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সুজা। তিনি বলেন, ‘এখন নির্বাচনের বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে একজন প্রশাসকের মাধ্যমে চলতে পারে না।’

সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান বাবলু বলেন, ‘আমি নির্বাচনের পক্ষে। তবে সে নির্বাচন যদি ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন হয় তাতে আমি রাজি নই। জেলার ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণমূলক ভোটে যদি নির্বাচন হয় এবং সে নির্বাচনে যে কোনো দলের ব্যবসায়ীরা দায়িত্ব আসুক তা হাসিমুখে মেনে নেব।’

এ বিষয়ে ডিসি মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের ব্যাপার নয়, এটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ফলে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে দেয়ার মতো কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’