নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়নও পূর্ণাঙ্গ কোনো পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে না। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ডেমোক্র্যাসি সাপোর্ট ও ইলেকশন কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ এ কথা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবার নির্বাচনি প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে না। ফলে নির্বাচনের প্রক্রিয়া বা পরবর্তী ফল নিয়েও কোনো মন্তব্য করবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশনও বাংলাদেশে আসবে না।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট জানিয়েছে, তাদের কোনো সদস্যকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা বা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের কোনো সদস্য যদি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেন, তবে তা কোনোভাবেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাষ্য হবে না।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ নিয়ে গৃহীত এক প্রস্তাবে নির্বাচনের বিষয়ে এ সংস্থার অবস্থান স্পষ্ট করা হয়। আসন্ন ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন ‘শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছতার সঙ্গে’ হবে বলে আশা প্রকাশ করে সেখানে সব রাজনৈতিক পক্ষকে ‘সহিংসতা ও উসকানির পথ’ পরিহারের আহ্বান জানানো হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রীতি অনুযায়ী ইউরোপীয় পার্লামেন্ট কাউকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিলে তারা ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশনের সঙ্গেই কাজ করেন। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত অক্টোবরেই নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল, এবার তারা পূর্ণাঙ্গ কোনো পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে না। শুধু দুজন বিশেষজ্ঞ নির্বাচন দেখতে বাংলাদেশে আসবেন। ওই দুই বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যে ঢাকা পৌঁছেছেন। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
এদিকে কেন আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কোনো প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে না তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইইউ’র রাষ্টদূত রেনজি টিরিংক। তিনি জানিয়েছেন, যে বিশেষজ্ঞ দলটি বাংলাদেশে এসেছে, তারা বাংলাদেশে ৪০ দিন অবস্থান করবে এবং বাংলাদেশের নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। সে সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বেশকিছু সুপারিশও দেবে।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সফরে আসা ইইউ নির্বাচনি বিশেষজ্ঞ এবং দল প্রধান ডেভিড নয়েল ওয়ার্ড। এছাড়া প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাংলাদেশ সফরে আসা নির্বাচনি বিশেষজ্ঞ ইরিনি-মারিয়া গোওনারি।
প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক না পাঠানো এবং নির্বাচনি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক কারণেই বাংলাদেশে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক পাঠানো হয়নি। একটি পূর্ণ নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে বেশ আগ থেকেই অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়। যার প্রস্তুতি কমপক্ষে ছয় মাস আগে থেকে শুরু করতে হয়। আমাদের অন্যান্য অংশীদার দেশগুলো থেকেও নির্বাচনি পর্যবেক্ষক পাঠানোর চাপ রয়েছে। ফলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ইইউ হেডকোয়ার্টার নির্বাচনি পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ফলে যতগুলো দেশ থেকে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ এসেছে, তার সবগুলো রাখা ইইউর পক্ষে সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনকে ইইউর পক্ষ থেকে কী ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে এবং তার জবাবে ইসি থেকে কী জানানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাফল্য কামনা করেছি। কারণ ১০ কোটি ৪০ লাখ ভোটার এবং ৪০ হাজার নির্বাচনি কেন্দ্র নিয়ে ইসির সামনে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমরা আশা করি এটি একটি বেশ প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। সে সঙ্গে অবাধ ও নিরপেক্ষও হবে।
ইইউ নির্বাচনি বিশেষজ্ঞ দলের সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, তাদের সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচনে ইইউ আগ্রহ রয়েছে তা প্রকাশ করা। ইইউ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের দিকে চোখ রাখছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না ইউরোপীয় পার্লামেন্ট
