নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহŸান জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। সংগঠনের নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকার অবৈধ নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো লোককে নির্বাচনে নামিয়েছে, যাতে করে বাংলাদেশের মানুষের মনে একটু আবেগ কাজ করে। এই আবেগকে কাজে লাগিয়ে তারাও নির্বাচনকে বৈধ করার চেষ্টা করছে।
গতকাল শুক্রবার পল্টনের আল-রাজি কমপ্লেক্সের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা। একতরফা ডামি নির্বাচন বর্জন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে গণমিছিলের আগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, তারা (সাকিব-মুর্তজা) যদি বাংলাদেশের মানুষের কথা চিন্তা করতেন, তাহলে তারা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেন না। এই সরকার বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরকে এই সরকার কলুষিত করেছে।
আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূসকে গত ১ জানুয়ারিতে এ সরকার মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে ছয় মাসের সাজা দিয়েছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা আজকের এই সমাবেশ থেকে ফরমায়েশি রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে ৭ তারিখে নির্বাচন জনগণকে বয়কট ও বর্জন করার আহŸান জানাচ্ছি।
সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনার বাবা বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করার জন্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল চালু করেছিলেন। তখন কিন্তু এই দেশের জনগণ সেই বাকশাল মেনে নেয়নি। আপনি যতই শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মদতে বাকশাল কায়েমের স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্ন এদেশের জনগণ তো দুঃস্বপ্নে পরিণত করবে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আপনি দেশের জনগণের কাছে মাফ চেয়েছেন, আমরা মাফ করতে চাই। কিন্তু আপনাকে মন থেকে মাফ চাইতে হবে, মন থেকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। এই বাকশালী নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে ফিরে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরের দেশের ১৬ লাখ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছে। উন্নয়নের গল্প শোনায়, পদ্মা সেতু দেখায়, মেট্রোরেল দেখায়। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ৩৩ হাজার কোটি টাকায় করেছে এই লুটেরা। উন্নয়নের কথা বলে, টানেলের কথা বলে। এ দেশের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ দিন আনে, দিন খায়। দিনে কাজ না হলে চুলা জ্বলে না। ওই মেট্রোরেল মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করবে না, ওই টানেল ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করবে না। সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আরও কয়েক কোটি মানুষ অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ৭০ শতাংশ মানুষ এখন জমানো টাকা খরচ করে খাচ্ছেÑযেগুলো জমা রেখেছিল তার মেয়ের বিয়ে, ছেলের বিয়ে এবং পরিবারের কোনো সদস্যকে দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য। সবাই বিনা ভোটে নির্বাচন করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। তাই সাধারণ মানুষের দুঃখ তারা বুঝবে না।
জনসাধারণের কাছে আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে দেখছি ঈগল, ট্রাক, নৌকাসহ কয়েকটি প্রতীকে নির্বাচন করছে। এসব প্রতীকের প্রতিটি প্রতীকই, কিন্তু শেখ হাসিনার প্রতীক। স্থানীয়ভাবে অনেকে হয়তো এক দেড় হাজার টাকা পায় দিনে, সেই হিসাবে নির্বাচনের ক্যাম্পেইন করেন। কিন্তু আমরা সারাদেশের জনগণকে অনুরোধ করছি, আহŸান জানাচ্ছি, ৭ তারিখ কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে না যান।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে তারা একটি মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ের দিকে যান।