Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:47 am

নির্বাচন ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের অন্তত দুই ডজন যন্ত্রাংশ, দুই জোড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক তার পুড়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ১২ তলা এ ভবনের বেজমেন্টে আগুন বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লেগেছিল বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এবার রক্ষা পাওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ এ ভবনে আগামীতে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে ইসি জানিয়েছে।
গত রোববার রাত ১১টায় নির্বাচন ভবনের বেজমেন্টে আগুন লাগে, এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ভবনে ভোটারদের ডেটাবেজের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে ১১ তলায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কক্ষ রয়েছে; গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে। ভবনের নিচ তলায় ইভিএম সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া ব্ল্যাঙ্ক স্মার্টকার্ড সংরক্ষণ ও মুদ্রণ যন্ত্র এ ভবনে রাখার পরিকল্পনা ছিল।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম গতকাল সোমবার অগ্নিকাণ্ডের স্থান পরিদর্শনে এসে বলেন, শর্টসার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি। ৫০-৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইভিএমের ১৫-২০টি ব্যালট ইউনিট, ২৫-৩০টি মনিটর, চারটি এসি ও অগ্নিকাণ্ডের কেবলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি আশঙ্কার তুলনায় খুবই সামান্য।
তিনি বলেন, আগুনে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যেটুকু ক্ষতি হয়েছে সেটুকু পানি দিয়ে নেভানোর কারণে, পানি যেহেতু স্প্রে করা হয়েছে, এ কারণে অতিরিক্ত পানিগুলো যাতে ব্যালট ইউনিটে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সেই জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা এখন সুপারিশগুলো কমিশনকে অবহিত করব এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেব। যাতে আমাদের জাতীয় সম্পদগুলো নষ্ট না হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, বেজমেন্টে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটায় প্রাথমিকভাবে শর্টসার্কিট থেকে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যকিছু মনে হচ্ছে না। অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপের কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে বলে মনে করেন এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক। স্পর্শকাতর এ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষা করতে বলেন তিনি।
অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ইসি গঠিত কমিটির সদস্যদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার সাইদুলও রয়েছেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ইসি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনের বেজমেন্টে আগুন লাগার পর ধোঁয়া বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত কেউ টের পায়নি।
ফায়ার অ্যালার্ম কাজ করেছিল কি না, তা নিশ্চিত করা যায়নি। অগ্নিনির্বাপণে বেজমেন্টে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ছিল কি না, তাও বলছেন না কেউ। বেজমেন্টের যে বদ্ধ কক্ষে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে, তাতে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা ছিল না, সেটাও জানা যাচ্ছে না।
ইতোমধ্যে নির্বাচন ভবনে অগ্নিকাণ্ডে করণীয় বিষয়ে মহড়াও হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে কাজ হয়েছে। তবে ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সচল রয়েছে কি না, তা তদারকিতে ঘাটতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে এ অগ্নিকাণ্ডে।
ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে জানান, ফায়ার অ্যালার্ম ও তাৎক্ষণিকভাবে স্বয়ংক্রিয় পানি ছিটানো যন্ত্র কাজ করেনি। রাত ১১টার পর অগ্নিকাণ্ড ঘটায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসেও দ্রুত ঢুকতে পারেনি। দুই প্রধান দরজা তালা থাকায় খুলতে দেরি হয়েছে। অন্য প্রান্তে কাচ ভেঙে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
বেজমেন্টে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ছিল কি না বা থাকলে কাজ করেছে কি না, সে বিষয়টি তদন্তে উঠে আসবে বলে মনে করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল। আগামীতে এ ভবনের স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে বলে জানান এনআইডি উইং মহাপরিচালক।