আজ ঢাকা মহানগরীর দুই সিটি করপোরেশনে ভোট। নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে দুদিন আগেই। এবারের নির্বাচন ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে। রাজধানীর উন্নয়নে সরকারের কর্মসূচি, আর এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে সৃষ্ট সমস্যায় নাকাল নগরবাসী। সেই সমস্যা সমাধানে প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রæতি। একইসঙ্গে বিস্তর অভিযোগ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের। বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করারও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা দেওয়া বা হামলারও। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের সংবাদ উঠে এসেছে। তারপরও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, ভোটাররা তাদের অধিকার প্রয়োগ করবে আজÑ এমনটিই প্রত্যাশিত।
ভোটারের অধিকার প্রয়োগের পুরো বিষয়টি নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের ওপর। কতটা সুষ্ঠু আয়োজন এবং ভোটকেন্দ্রের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের, তার ওপর নির্ভর করছে ভোটাধিকার প্রয়োগ। মানুষের আস্থা না থাকলেও নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ইভিএম মেশিনে ভোটের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু সেই প্রশিক্ষণের বিষয়েও ভোটারদের নানা অভিযোগ। ইভিএম মেশিনে কোথায় ভোট দিল তা ভোটার প্রত্যক্ষ করতে পারে না। অন্যদিকে প্লাস্টিক লেমিনেটেড পোস্টারে সয়লাব মহানগর।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। ওই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সাঈদ খোকন এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে আনিসুল হক বিজয়ী হন। তারা দু’জনই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ আতিকুল ইসলামকে প্রার্থী করে। এবারও আওয়ামী লীগ আতিকুল ইসলামকেই প্রার্থী করেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সাঈদ খোকনের পরিবর্তে ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি উত্তর সিটিতে ২০১৫ সালের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকেই মনোনয়ন দিয়েছে। দক্ষিণে তাদের নতুন প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধান শর্ত জনগণ নির্ভয়ে, সঠিকভাবে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সেই প্রতিনিধি মনোনীত করার জন্য নির্বাচনই একমাত্র উপায়। নির্বাচন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে প্রশ্নবিদ্ধ হয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। প্রশ্নবিদ্ধ হয় গণতন্ত্র নামক রাজনৈতিক দর্শন। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিগত দিনে বর্তমান কমিশনের কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষের আস্থার মাত্রাটা খুব ভালো নয়। সেই অভিযোগ থেকে বেরিয়ে এসে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুষ্ঠু নির্বাচন করুক কমিশনÑএটাও সবার প্রত্যাশা। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট দেবে, নির্বাচনী ফলাফলে সেই ভোটের যথাযথ প্রতিফলন ঘটবেÑএটাই জনগণের প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলে প্রার্থীর সঙ্গে বিজয়ী হবে গণতন্ত্র।