‘ডাহুক নদীতে নির্বিচারে চলছে পাথর উত্তোলন’শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। আমাদের প্রতিনিধি জানান, বিধিনিষেধ অমান্য করেই পাথর উত্তোলন করায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাহুক নদী। একসময় অত্যাধুনিক খননযন্ত্রের সাহায্যে পাথর তোলার কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে নদীটি। এখন অভিনব পদ্ধতিতে পাওয়ার টিলার দিয়ে তোলা হচ্ছে পাথর। গত রোববার সরেজমিন দেখা যায়, লোহাকাচি-বালাবাড়ী এলাকায় পাথর উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। পাথর উত্তোলন চলে নদীর শালবাহান মাঝিপাড়া, কালীতলা, লোহাকাচী, বালাবাড়ী, বুড়াবুড়ির কাটাপাড়া, সরকারপাড়া ও হারাদিঘি এলাকায়।
পাথর আবাসনশিল্পের অতিগুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু এটি উত্তোলন করতে গিয়ে নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা ১৪২৬ বঙ্গাব্দ থেকে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডাহুক নদীর পাথর মহাল ইজারা বন্ধ রেখেছে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন করেই চলছেন। একজন ইউপি বলেছেন, তার কয়েকটি ট্রাক্টর পাথর পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয়। তিনি যুক্তি দেখান, ওই অঞ্চলের শত শত শ্রমিক পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি এমনভাবে বলেছেন, পাথর ছাড়া জীবিকা নির্বাহের কোনো উপায় নেই। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য যেন দায়সারা গোছেরÑ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এর আগেও ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং তা চলমান থাকবে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা পাথর। সরকারের খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর দায়িত্ব সেগুলো তদারকি করা। কারণ, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিন্যস্ত এসব পাথরখণ্ড খনিজ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।
দেশের অবকাঠামো নির্মাণের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহারের জন্য এসব পাথর তোলা হচ্ছিল বহু বছর ধরে। খনিজ সম্পদ বিভাগ পাথর কোয়ারিগুলো লিজ দিত, তবে সে জন্য কিছু নিয়মকানুন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু সেসব না মেনে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় পাথর তোলা হয়েছে বহু বছর ধরে। তাছাড়া ইজারার বাইরেও অনেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ পাথর তুলছে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বেলার দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০১০ সালে যান্ত্রিকভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার জন্য রায় দেন। সংগঠনটির আরেক রিট আবেদনের রায়ের ফলে সিলেটের জাফলংকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। অথচ দীর্ঘদিন সে রায় বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা মনে করি ওই রায় বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
যেখানেই নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে, সেখানেই পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংসের পাশাপাশি রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীভাঙন, ভ‚মিধস হয়েছে। তাই প্রকৃতির রুদ্ধরোষ থামাতে নিজেদের স্বার্থেই পাথর উত্তেলন বন্ধ করা উচিত। সরকার যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমাদের পানি, বাতাস দূষিত হবে। জীববৈচিত্র্য আরও বিপর্যস্ত হবে, সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্প বাধাগ্রস্ত হবে। সরকারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর স্বাভাবিকভাবেই এসবের কুফল মানুষকেই ভোগ করতে হবে, যেমনটা অতীতে হয়েছে।