দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত সহিংসতায় নির্বিচার গণগ্রেপ্তারে খবর প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীদের অনেকে। গতকাল এক সমাবেশে নারী অধিকারকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী, গৃহিণী, শিক্ষক, গবেষক, লেখক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী প্রতিনিধিরা বলেছেন নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড, গণগ্রপ্তার কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। এছাড়া দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘটিত সহিংসতা ও বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাবিদ, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে বৃহস্পতিবার লেখা এক চিঠিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, চিঠিতে বলা হয়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অন্যদের হতাহত হওয়ার ঘটনায় তারা (চিঠিতে সই করা বিশিষ্টজনরা) গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ওই ঘটনা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মৌলিক অধিকারই শুধু খর্ব করেনি; বরং বাংলাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের অধীন মানুষের জীবনধারণের অধিকারের নিশ্চয়তাকে উপহাস করেছে।
অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে বা এলাকার লোকজন যাদের দেখেছে, তাদের অ্যারেস্ট করতে বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বলেছেন, অভিযানে নিরপরাধ মানুষ গ্রেপ্তার হওয়ার সুযোগ নেই। শুধু যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ভিন্ন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সহযোগী সংগঠনগুলোকে যেভাবে ছাত্রদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন, সেটিকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক তারা। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ও বিজিবির সহযোগিতায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি করে। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক ছাত্র ও জনতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের গণগ্রেপ্তার চলছে।
সরকারের উচিত সহিংসতার সব ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা। এমনকি উভয় পক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করেছেÑএমন মামলাও তদন্ত করা উচিত। সরকার কূটনৈতিক অংশীদার তথা উন্নয়ন সহযোগীদের ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আমার মনে করি, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে সাধারণ মানুষকে প্রতিপক্ষ ভাবা ঠিক হবে না। এভাবে চলতে থাকলে কূটনৈতিক অংশীদারদের আস্থা হারাবে বাংলাদেশ। এমনকি দমন-পীড়ন ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বিপন্ন করার আশঙ্কা দেখা দিযেছে। এরই মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের অবস্থান সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে।
প্রবাসীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে না, কথিত সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনী অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং নির্বিচার গণগ্রেপ্তার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।