নির্ভরযোগ্য শেয়ারে ঝোঁক বিনিয়োগকারীদের

শেখ আবু তালেব: মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে রমজান শুরু হওয়ার আগেই পুঁজিবাজারে তারল্যের চাপ দেখতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। রমজানজুড়েই এমন চাপ থাকার শঙ্কা রয়েছে। এতে ঝুঁকিহীন ও নির্ভরযোগ্য শেয়ারের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছেন মূলধারার বিনিয়োগকারীরা। এজন্য কাছে থাকা সর্বনিন্ম ঝুঁকির শেয়ার বিক্রি করে পোর্টফলিওতে পরিবর্তন আনছেন তারা।

এতেই মিশ্রপ্রবণতার মধ্য দিয়ে সপ্তাহ পার হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। গত ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ডিএসইর সাপ্তাহিক তথ্য বিশ্লেষণ ও বাজার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।

রমজানজুড়ে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন প্রবণতা একটু কম থাকে। শেষের দিকে বিক্রয় প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। নগদ অর্থের প্রয়োজনেই এমনটি দেখা যায়। কিন্তু এবার এমন প্রবণতা একটু আগেই দেখা দিতে শুরু করেছে। কারণ হিসেবে দেশের শীর্ষ এক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন মূল্যস্ফীতির চাপকে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের হাতে নগদ অর্থ কমে যাচ্ছে। অনেকেই সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। এর প্রভাবে ব্যাংকেই কমেছে আমানতের হার।

অপরদিকে বেসকরারি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। একদিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং অপরদিকে বিনিয়োগ বৃদ্ধির চাপ দেখছেন ব্যাংকাররা। এজন্য আমানত টানতে মুদ্রাবাজারে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজারে। তারল্যর চাপ ঠেকাতে অবশ্য বেশকিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের পোর্টফলিওতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে বৈঠক করেছে বিএসইসি। এছাড়া ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধপত্র দিয়েছে।

ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেন ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে আগের সপ্তাহের চেয়ে। এ সময়ে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৯৩টি সিকিউরিটিজ। এর মধ্যে দর বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭৯টির, কমেছে ১৭০টির, অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টির ও লেনদেন হয়নি ৯টির।

এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন এবং আইটি খাতের প্রতি। অধিকাংশ খাতই এ সময় ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করেছে; এর মধ্যে ট্যানারি খাত ছয় দশমিক চার শতাংশ, সাধারণ বিমা খাত পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ ও সিমেন্ট তিন দশমিক চার শতাংশ। অপরদিকে নেতিবাচক প্রবণতায় ছিল জীবন বিমা খাত দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ, বিবিধ খাত এক দশমিক সাত শতাংশ ও ব্যাংক এক দশমিক চার শতাংশ।

ডিএসইর লেনদেনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অবদান রেখেছে প্রকৌশল খাত। এর পরই রয়েছে ওষুধ খাত ৯ দশমিক আট শতাংশ, আইটি ৯ দশমিক সাত শতাংশ ও ট্যানারি ৯ দশমিক তিন শতাংশ।

লেনদেন বৃদ্ধিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে এক হাজার ১৫২ কোটি টাকা। ডিএসইর তথ্য বলছে, একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহে শেয়ারের দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। গত সপ্তাহ শেষে এর শেয়ারদর সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারদর বেড়েছিল কোম্পানিটির। এর পরই রয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ও ফরচুন শুজ। এই কোম্পানিটি গত সপ্তাহে একক হিসেবে সর্বোচ্চ শেয়ার লেনদেন করেছে। এর পরই রয়েছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড।

অপরদিকে এ সময় শেয়ারের দর হারানোর তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। কোম্পানিটি গত সপ্তাহে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ারের দর হারিয়েছে। এর পরই রয়েছে এটলাস বাংলাদেশ, জিবিবি পাওয়ার, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি।

‘এ’ ক্যাটেগরির বাইরে থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটেগরিতে থাকা শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের বেড়েছে সাত দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ারদর বেড়েছে ছয় দশমিক ৬৮ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০