নির্মাণকাজ বন্ধের হুমকি সংশ্লিষ্টদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে এমএস রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধভাবে নিয়মনীতি না মেনে পণ্যটির মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশের নির্মাণশিল্প। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপের আহ্বান করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)। অন্যথায় আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে সব নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়ী নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএসিআই’র সভাপতি মুনীর উদ্দিন আহমেদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি শেখ মোঃ রফিকুল ইসলাম, সফিকুল আলম ভুইয়া, আতিকুর রহমান, আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও বর্তমান সহসভাপতি এসএম খোরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের এমএস রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এককতরফাভাবে নিয়ম-নীতি না মেনে এমএস রডের মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে বিলম্বের কারণে রডের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করে। কিন্তু এসব কারণ দেখিয়ে কয়েকটি উৎপাদক কোম্পানি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্ক্র্যাপ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে রডের মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক করে তুলেছে।

বক্তারা দাবি করেন, যৌক্তিক কারণে রডের সাত থেকে আট শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে না। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত এমএস রডের মূল্য টনপ্রতি ৪৮ হাজার থেকে ৭২ হাজার হয়েছে।

রডের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে সক্রিয় এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, ‘আমরা আশা করছি সরকার অতি দ্রুত পিপিআর অনুযায়ী মূল্য সমন্বয়সংক্রান্ত বিধি (২৯.৯) কার্যকর করবে। না হলে আমরা আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে সব নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো।’

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই রডের মূল্য বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতের ব্যয়বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপাদান এমএস রড। অবকাঠামোর সম্পূর্ণ কাজের মধ্যে রডজাতীয় কাজের পরিমাণ হয় ২০-২৫ শতাংশ। তাই এসএম রডের মূল্য বাড়লে পুরো স্থাপনার নির্মণ ব্যয় সাত-আট শতাংশ বেড়ে যায়। রডের মূল্য বাড়ায় নির্মাণ খাতের চলমান কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বক্তারা বলেন, এমএস রডসহ সব নির্মাণসামগ্রীর মূল্য হিসাব করে টেন্ডারপ্রতি আইটেমের দর উল্লেখ করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। আর সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে একদরে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। যে কারণে সামগ্রীর মূল্য বাড়লেও সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হয় না, যদিও বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পে মূল্য সমন্বয় করা হয়।

এ অবস্থায় এমএস রড ও সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধিতে নির্মাণ খাতের চলমান কাজ ধীরগতির হয়ে পড়েছে। অনেকটা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে বিপুল লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। এছাড়া জিডিপিতে নির্মাণ খাতের অবদান ৯ শতাংশ। তাই নির্মাণকাজ বন্ধ হলে প্রচুর জনবল কর্মহীন হয়ে পড়বে এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি পিছিয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, অনতিবিলম্বে এমএস রডের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ ও আপনাদের সার্বিক সহায়তা কামনা করছি। এমএস রডের সিন্ডিকেটের সাফল্য পাওয়ার পরে সিমেন্ট কোম্পানিগুলো যোগসাজশ করে সিমেন্টের মূল্য গত ২৫ দিনে প্রতি ব্যাগে প্রায় ৬০ টাকা বাড়িয়েছে, যা একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার। এমএস রড ও সিমেন্টের সিন্ডিকেট ভাঙা না গেলে অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী, যেমনÑটাইলস, ইলেকট্রিক কেব্ল ও স্যানিটারি মালামাল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা করা যায়। এছাড়া স্টোন চিপস (পাথরকুচি) এবং ইটের মূল্য অনেকখানি বেড়েছে। ব্যাংকের সুদের হার বেড়েছে, যা সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০