Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:12 pm

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ৭ কোটি টাকার সেতুতে ফাটল

জিএম জয়, রংপুর ; রংপুরের পীরগঞ্জে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই করতোয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন ন্যূনদহ সেতুর নিচে পিলারে বড় ধরনের ফাটল (ধস) দেখা গেছে। ফলে প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুর ভবিষ্যৎ স্থায়িত্ব ও কাজ সমাপ্তি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশ কিছুদিন ধরে নির্মাণকাজ স্থগিত করে রেখেছে। হঠাৎ সেতুর মূল পিলার ধসে যাওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এদিকে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ার আগেই এমন ফাটল ধরায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, এলজিইডির প্রকৌশলীদের দায়িত্বহীনতা ও লুটপাটের কারণে সেতুর নিচে পিলারে ফাটল ধরেছে। এ সেতুর নির্মাণকাজে গাফিলতি ও অনিয়ম করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি সচেতন মহলের।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পীরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল এবং দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার মানুষের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করতোয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের আলোকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) আওতায় সিআইবি প্রজেক্টের মাধ্যমে করতোয়া নদীর ওপর চতরা জিসি গিলাবাড়ি ঘাট ভায়া নিশ্চিন্তবাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কে ন্যূনদহ ঘাট পর্যন্ত করতোয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ২৬ কোটি ৮২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী। এ নদীটির কারণে প্রতি বছর বন্যায় ভেঙে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় অসংখ্য গ্রাম করতোয়ায় বিলীন হয়ে গেছে। ঘোড়াঘাটের সিংড়া ইউনিয়নের মারনুপাড়া এবং পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের গিলাবাড়ী করতোয়া নদীর ন্যূনদহ ঘাটে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। সেতুটি নির্মিত হলে পীরগঞ্জের সঙ্গে ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলাসহ হিলি, জয়পুরহাট এবং গোবিন্দগঞ্জ-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হবে।

এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে করতোয়া নদীর নুনদহ ঘাটে ৩০১ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিপি এল জেভি ৫২ ছাত্তার ম্যানসন ও প্যান্স লাইন্স। শর্তানুযায়ী ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্রিজের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখন পর্যন্ত নুনদহ ব্রিজের মাত্র ৭০ শতাংশ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে বছর দুয়েক ধরে নির্মাণকাজ স্থগিত রেখেছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি নদীর পানি শুকিয়ে গেলে সেতুটির ৫নং পিলারটির বেজমেন্ট ফেটে মাটির নিচে ধসে পড়ে যায়।

সেতুর নিচে হঠাৎ পিলারে ফাটল দেখা দেয়ার ঘটনাটি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। এলজিইডির পীরগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তাদের দৌড় শুরু হয়। ওই ঘটনায় সম্প্রতি ঢাকা থেকে তিন সদস্যদের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি সেতুটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন সেতুর কাজের গুণগত মান, নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী মজিবর রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করেন। তবে ফাটল দেখা দেয়া অংশের কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ কি না বা এ ভবিষ্যৎ কী, তাও স্পষ্ট করেন পরিদর্শনে আসা তদন্ত কমিটি।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর মজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০১৯ সালে সেতুটির পিয়ার ক্যাপের কাজ হয়। ওই সময়ে করা ৫নং পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনা দেখতে ঢাকা থেকে এলজিইডির ৩ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম ঘটনা তদন্ত করতে আসে। ওই টিমের সঙ্গে রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলীও ছিলেন। তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও জানান, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সেতুটির জন্য ৫ একর ৩৩ শতাংশ জমি এখনও অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। কাজ করতে গিয়ে বারবার জমির মালিকদের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী জানান, সোমবার ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত দল সেতু পরিদর্শন করেছে। ঢাকা থেকে তদন্ত করতে আসা প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদন দেয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

জমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রকৌশল বিভাগের অনুমোদন ও ঢাকার প্রধান প্রকৌশল দপ্তরের অনুমোদনপত্র নিয়ে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। জেলা ভূমি কার্যালয় থেকে অনুমোদন এলেই জমির মালিকরা জমি অধিগ্রহণের টাকা পাবে এবং সেতুর নির্মাণ কাজেরও গতি বাড়বে।