Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 4:45 pm

নির্মাণব্যয় ৩,৪২৬ কোটি টাকা বাড়ানোর পর সাশ্রয় ৪৬ কোটি

ইসমাইল আলী: উন্নয়ন প্রকল্প দুবারের বেশি সংশোধন না করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সে নির্দেশনা না মেনে পাঁচবার সংশোধন করা হয়েছে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটি। সম্প্রতি এটি পঞ্চম দফা সংশোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে চার দফায় মোট তিন হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর শেষবার সাশ্রয় দেখানো হয়েছে ৪৬ কোটি টাকা।

জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, সব মিলিয়ে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে গেছে সাকুল্যে তিন হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বা ১২১ শতাংশ।

সূত্রমতে, জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় প্রাথমিকভাবে ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। তবে ১০ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বাড়ে ৩১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সে সময় ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল।

এরপর ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ জমির দাম বৃদ্ধির যুক্তিতে প্রকল্পটি আরেকবার সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বাড়ানো হয় ২৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৩৬৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর ২০১৮ সালের ৮ মে প্রকল্পটি তৃতীয় দফা সংশোধন করা হয়। সে সময় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৫৯৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ধীরগতির যানবাহনের জন্য একটি নতুন সড়ক লেন, ৫টি ফ্লাইওভার, ১৩টি আন্ডারপাস ও কংক্রিট পেভমেন্ট অন্তর্ভুক্তি এবং জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধির যুক্তিতে সেবার ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

এদিকে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেন প্রকল্পের চতুর্থ দফা ব্যয় বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ৯ জুন। সে সময় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ২১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে চতুর্থ দফা প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। চার দফা মিলিয়ে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ে তিন হাজার ৪২৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

পঞ্চম দফা প্রকল্পটি সংশোধন করা হয় গত ২২ ফেব্রুয়ারি। এ সময় মহাসড়কটির নির্মাণব্যয় কিছুটা কমে দাঁড়ায় ছয় হাজার ১৬৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৪৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় কমানো হয়। সর্বশেষ এ সংশোধনের কারণ হিসেবে ডিপিপিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় চন্দ্রায় প্রস্তাবিত গ্রেড সেপারেটেড লুপ বাদ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৩টি আন্ডারপাসের পরিবর্তে ২টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি পয়েন্টে নির্মাণ করা হবে ফুটওভার ব্রিজ।

এর পাশাপাশি কালিয়াকৈরের লতিফপুরের ধীরগতির যানবাহনের জন্য নির্মিতব্য ওভারপাসটিও বাদ দিতে হচ্ছে। তবে কালিয়াকৈরে টানসূত্রাপুর এলাকায় একটি ট্রাক স্ট্যান্ড নতুন করে নির্মাণ করা হবে। আর ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, রেলওভারপাসসহ পুরো সড়কে লাইটের ব্যবস্থা করা নতুন করে যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ভ্যাট, আইটি ও কাস্টমস ডিউটি খাতে ব্যয় বেড়েছে, বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে পরামর্শক সেবা ও ঠিকাদারের চুক্তিমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ব্যয় কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে।

উল্লেখ্য, জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা প্রকল্পটি পাঁচটি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্যাকেজের আওতায় ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। অপর প্যাকেজের আওতায় সওজের প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) ও আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এডিএফডি)। প্রাথমিকভাবে এক হাজার ৮৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল তিন সংস্থার। আর সরকারের দেয়ার কথা ছিল ৯৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তবে সর্বশেষ সংশোধনের পর তিন সংস্থা ঋণ দিচ্ছে তিন হাজার ২০৫ কোটি টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে দুই হাজার ৯৬৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।