নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক দামের কারণ খতিয়ে দেখুন

দেশের সম্ভাবনাময় খাত আবাসন শিল্প। কভিডকালে অন্য সব খাতের মতো এ শিল্পেও ধস নেমেছে। প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল নির্মাণকাজ। সম্প্রতি তা আবারও শুরু হলেও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। বড় আবাসন কোম্পানিগুলো কোনো রকমে নির্মাণকাজ চালিয়ে গেলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান সংকটে রয়েছে। রড, সিমেন্ট, ইট ও পাথর প্রভৃতি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বড় অঙ্কের লোকসান হওয়ার আশঙ্কায় ছোট আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত প্রায় ২০০টি খাত এবং অন্তত ৩৫ লাখ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আবার নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাটের দামও কয়েকগুণ বাড়বে; যা সাধারণ মানুষের আর্থিক সক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এতে ফ্ল্যাট বিক্রি কমবে। আবাসন শিল্পে ধস নামবে। এ শিল্পে জড়িত প্রকৌশলী, স্থপতি, সিমেন্ট শিল্প, রি-রোলিং মিলস, ইটভাটা, বালি, টাইলস-সিরামিক, পাথর, পরিবহন, পাইপ, ফিটিংস, কেব্লস, কাচ ও অ্যালুমিনিয়াম ফিটিংসসহ বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা দেখা দেবে। অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ইদানীং একটা কথা খুব শোনা যায়, সব পণ্যের দামেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। এটি যৌক্তিক নাকি সুযোগসন্ধানী অসাধু চক্রের সৃষ্ট, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। অবকাঠামো খাতে কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় রডের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু হিসেবে উৎপাদনও বেড়েছে। বড় শিল্পগোষ্ঠী যেখানে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে গিয়ে হিমশিম খায়, সেখানে ব্যক্তির অবস্থা আরও সঙ্গীন। আগের বাজেট আর কাজ শুরুর পরের খরচ কোনোভাবেই মেলানো যাচ্ছে না। যারা দাম কমবে আশায় কাজ বন্ধই করে দিয়েছেন, তারা আফসোস করছেন।

নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের দামও বাড়বে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। আগে তৈরি এবং বিক্রির অপেক্ষায় থাকা ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট প্রস্তুতে খরচ বেশি হয়েছে। ক্রেতাদের সংশয়, খরচ বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে নি¤œমানের পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রশ্ন ওঠে, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় না হয় রডের দাম বেড়েছে, তাহলে গত বছরের মাঝামাঝি লকডাউনের সময় কেন রডের দাম বাড়ল? তখন তো নির্মাণকাজও অনেকটা বন্ধ ছিল। তাই বলা যায়, সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজিতেই নির্মাণসামগ্রীর বাজারে অরাজকতা চলছে। রডসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাসন শিল্পে স্থবিরতা দেখা দেয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে এ খাত-সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। সাশ্রয়ের জন্য শ্রমিকদের মজুরি কমিয়ে দিতেও পারেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। শ্রমিকদের বড় অংশের কাজ হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নির্মাণ খাতের কর্মকাণ্ডের স্থবিরতা দূর করে শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০