Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:26 am

নির্মাণে ত্রুটির জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনুন

‘চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ে ওভারপাস: র‌্যাম্প নির্মাণে ত্রুটি, ব্যয়ের সঙ্গে বেড়েছে ভোগান্তি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিনিধি জানান, চলতি বছরের ৩০ জুন চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ। মাঝপথে এতে নির্মাণে ত্রুটি দেখা দেয়ায় বেড়েছে সংশোধন ব্যয়। এতে ওভারপাসে উঠতে সংযোগ পথ অনেকটা খাড়াখাড়ি হচ্ছিল। এজন্য র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য আরও ১১২ মিটার বাড়ানো হয়েছে। এতে নতুন করে ব্যয় বেড়েছে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ফলে ‘উন্নয়ন ভোগান্তি’ বাড়ল আরও এক বছর।

যানজট কমানো ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ চালু রাখতে চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলবাজারে ওভারপাস নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের পর নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বছরের ১২ আগস্ট। গত ৩০ জুন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংশোধন ব্যয় ও সময়কাল বাড়ানো হয়েছে। সব প্রকল্পেই কাজ শুরুর আগে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে কম নয়। খুব কম প্রকল্পই নির্ধারিত ব্যয় ও সময়ে সম্পন্ন হয়েছে। প্রায়ই ব্যয় বৃদ্ধির চক্রে ঘুরপাক খায় উন্নয়ন প্রকল্প। এ ক্ষেত্রে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ে ওভারপাস র‌্যাম্প নির্মাণে ত্রুটি জনভোগান্তিই বাড়ায়নি, রাষ্ট্রের ব্যয়ও বাড়িয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যয় বৃদ্ধি সাধারণ প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এমন কথা বলে আসছে। যথাযথ সম্ভাব্যতা পরীক্ষা, যাচাই-বাছাই ছাড়াই কেন এমন প্রকল্প বেড়েই চলেছে, তার দায় কে নেবে! সব প্রকল্পে বাস্তবায়নের সময় দফায় দফায় বাড়াতে হয়। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পে শুরু থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের মতো ছোট প্রকল্পও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থা না নিলে এমন অবস্থা চলতেই থাকবে। নির্মাণে ত্রুটির জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার সংস্কৃতি থাকলে সরকারের অর্থের এমন অপচয় কিংবা লোপাট হতো না।

বারবার প্রকল্প সংশোধন ও মেয়াদ বাড়ানোর ফলে অনেক ক্ষেত্রে গুণগতমান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। যথাযথ পরিকল্পনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করলে এমন হতো না বলে আমরা মনে করি।
একটি প্রকল্পে এত সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এত বছর পরও এ ধারার বাইরে আসতে না পারা দুঃখজনক। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকল্পে ধীরগতির ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে কি না- তা খতিয়ে দেখতে হবে। নির্মাণ ত্রুটির জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রক্রিয়া চুয়াডাঙ্গা থেকেই শুরু হোকÑএমনটাই প্রত্যাশা।