নিলামে উঠছে সিলভিয়া গ্রুপের জমি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির, মিজানুর রহমান শাহিন ও মজিবুর রহমান মিলন এ তিন সহোদর মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সিলভিয়া গ্রুপ। গত ২০ মার্চ পর্যন্ত এ গ্রুপের কাছে বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সুদসহ মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় সিলভিয়া গ্রুপের এক হাজার ৭৪০ শতাংশ জমি নিলামে তুলছে ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখা।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, জাহাজ ভাঙা ও আবাসন ব্যবসার জন্য মিশম্যাপ শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ, মিশম্যাক ডেভেলমেন্ট লিমিটেড, মিশম্যাক ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ও মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন এক হাজার ৭৪০ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেয় সিলভিয়া গ্রুপ; যা গত পাঁচ বছরে এক টাকাও পরিশোধ করেনি। বারবার যোগাযোগ করার পরও কোনো সাড়া না পাওয়ায় ব্যাংক এসব বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব জমির অধিকাংশই সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি মৌজায় অবস্থিত। আর কিছু মান্দারিতলা, কৃষণাপুর, জঙ্গল লতিফপুর, মাকনাম নগরের। মাত্র ১৩ শতক জমি আছে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায়, যা আগামী ২৪ এপ্রিল নিলামের দিন ধার্য করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। এতে আগ্রহীদের ব্যাংকের শাখাপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ইভিপি এবং আঞ্চলিক প্রধান ও আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মাহিববুল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা বারবার যোগাযোগ করেও মিজানুর রহমানের কোনো সাড়া পাইনি। আমাদের নিয়মানুসারে আমরা নিলামে তুলেছি। যদি ক্রেতা পায়, তাহলে বিক্রয় করব। আর না হলে ব্যাংকের নামে নিবন্ধন করিয়ে নেব। আমরা আমাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করব।’

আদালত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ৭৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা ব্যাংক মুরাদপুর শাখা কর্তৃক দায় করা মামলায় মুহাম্মদ মিজানুর রহমান শাহীনকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি অর্থদণ্ডও প্রদান করেন। ফলে আবারও আলোচনায় এলো সিলভিয়া গ্রুপের ঋণখেলাপির বিষয়টি। মেসার্স আহমেদ মুজতবা রি-রোলিং মিলস ও ফয়জুন শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক হিসেবে উল্লিখিত ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। এ বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর আসামি ব্যাংকের বরাবর ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৫ টাকা ৪৭ পয়সার একটি চেক প্রদান করেন। এরপর ২৮ নভেম্বর চেকটি ডিজঅনার হয়।

এ অবস্থায় বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তরফে মুরাদপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মুহাম্মদ অহিদুল আলম উল্লিখিত শিপইয়ার্ড ও আবাসন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলার রায়ে গত ২৫ জানুয়ারি আদালতের বিচারক ব্যবসায়ী শাহীনকে উল্লিখিত অঙ্কের টাকা জরিমানা ছাড়াও এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। অপরদিকে ফয়জুন অক্সিজেন প্লান্ট ও ফয়জুন শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক হিসেবে ব্যবসায়ী মুহাম্মদ মিজানুর রহমান শাহীন ব্যাংকের একই শাখা থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর ওই আসামি ব্যাংকের বরাবর ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮৭ টাকা ৯৪ পয়সার একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে এর পরের দিনই চেকটি ডিজঅনার হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর একই বছর ৯ জানুয়ারি এ টাকা উদ্ধারে একটি মামলা করেন ব্যাংক কর্মকর্তা মুহাম্মদ অহিদুল আলম। একই সময় এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন বিচারক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। রায়ে উল্লিখিত চেকের টাকা জরিমানা ছাড়াও তাকে এক বছরের কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের ব্যাংকপাড়ায় আলোচিত সিলভিয়া গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেÑমিশম্যাপ শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ, মিশম্যাক ডেভেলমেন্ট লিমিটেড, মিশম্যাক ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, মিশকাত শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ, মিশুটিন শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ, ফয়জুন ট্রেডার্স, ফয়জুন অক্সিজেন প্লান্ট, ফয়জুন এসিথিলিনে প্লান্ট, মিশম্যাক এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ও আহমেদ মোস্তফা রি-রোলিং মিল, ফয়জুন শিপ ব্রেকিং ও বিআর স্টিল মিল। হালিশহর এলাকার বাসিন্দা আহমদ মোস্তবা ও ফয়জুন নেসা বেগমের পুত্র হুমায়ুন কবির, মিজানুর রহমান শাহীন ও মজিবুর রহমান মিলনÑএ তিন ভাই মিলে প্রতিষ্ঠা করেন এ গ্রুপ।

এ গ্রুপের ঘনিষ্ট এক সূত্র জানায়, মজিবুর রহমান মিলন, মিজানুর রহমান শাহীন ও হুমায়ুন কবির আপন তিন ভাই। মজিবুর ও মিজানুর এখন সপরিবারে দেশের বাইরে আছেন। এদের মধ্যে মজিবুর সিঙ্গাপুর ও মিজানুর কানাডায় আছেন বলে তারা শুনেছেন। অপর ভাই হুমায়ুন কবির দেশে যাতায়াতের মধ্যে আছেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, মিজানুর রহমান শাহীন এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে সিলভিয়া গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ গ্রুপের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় সিলভিয়া গ্রুপের অফিসের ঠিকানায় সরেজমিন গেলেও কোনো অফিস পাওয়া যায়নি। ফলে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামভিত্তিক সিলভিয়া গ্রুপের মোট ঋণের মধ্যে আছেÑব্যাংক এশিয়ার ১৪০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১২৪ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ১৪৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৮৯ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ৪৮ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৪৩ কোটি, শাহ্জালাল ৭ কোটি ২০ লাখ ও যমুনা ব্যাংকের ঋণ আছে ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। তাদের নেওয়া সব ঋণই এখন খেলাপি। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করেই দেশ ছেড়েছেনÑএকজন আছেন কানাডায়, অন্যজন সিঙ্গাপুরে। আরেকজনের অবস্থান জানা যায়নি। অনিয়ম আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে কিছু ঋণ এরই মধ্যে অবলোপনও করেছে কয়েকটি ব্যাংক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০