নিষিদ্ধ স্থানে বর্জ্যরে স্তূপ!

সিয়াম মাহমুদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে রাজু ভাস্কর্যের পাশে মেট্রোরেলের এলটি পিলারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (২১নং ওয়ার্ড) একটি ব্যানার। তাতে লেখা, ‘এখানে ময়লা ফেলা নিষেধ’। অথচ এই নিষিদ্ধ স্থানেই জমে উঠেছে বর্জ্যরে স্তূপ। কিন্তু কেন? রাজধানী ঢাকা শহরে বসবাসকারী প্রত্যেকে নাগরিকই তো কমবেশি শিক্ষিত। বিশেষ করে টিএসসি চত্বরে যাদের যাতায়াত, তারা অবশ্যই লেখাপড়া জানে। তাহলে কেন ব্যানারের লেখাটি কারও চোখে পড়েনি বা চোখে পড়লেও কাজে তা বাস্তবায়ন করেননি? এটা কি প্রশাসনের দায় নাকি নাগরিকদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়?

আমাদের নতুন প্রজš§ প্রায়ই উন্নত রাষ্ট্র কিংবা ইউরোপ, আমেরিকা মহাদেশের রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দেশের তুলনা করে থাকে। বিশেষ একটা অংশ লেখাপড়া করে বিদেশে পাড়ি জমাতে চাই; কারণ তাদের মতে, এদেশে তেমন কোনো নাগরিক সুবিধা নেই এবং চারপাশের পরিবেশ নোংরা। এ কথাগুলো যারা বলে, তারা কখনও রাস্তায় চলার পথে তাদের খাওয়া পানি, কোমল পানীয়ের বোতল কিংবা খাবারের প্যাকেট, পলিব্যাগ নির্দিষ্ট ময়লার ঝুড়িতে অথবা ড্রামে ফেলে দিই না। তাদের খাওয়া যেখানে শেষ হয়, সেখানেই ঢিল মেরে তা ফেলে স্বাচ্ছন্দ্যে নিজ গন্তব্যে চলে যায়। এমন একজন-দুজন করতে করতে এই স্থানটি হয়ে যায়, ‘বর্জ্যরে স্তূপ’। এই মন মানসিকতার পরিবর্তন কীভাবে করা যায়? এই পরিবর্তন হবে, তখনই যখন পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নাগরিক দায়িত্ব এবং মূল্যবোধ শিখতে পারবে। এই বিষয়ে পরিবারের অভিভাবকদের নজরদারি বাড়াতে হবে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় না। আমি কখনও আমার শিক্ষকদের এই বিষয়ে কথা বলতে শুনিনি, আপনারা কেউ শুনেছেন কি? যদি শিশু শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হতো, তাহলে ঠিকই সবাই ওই বিষয়ে সচেতন হতে পারত। এখানে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোনোভাবে তাদের দায় এড়াতে পারবে না।

এটিও ঠিক যে, রাজধানীতে রাস্তার দু’পাশে পথচারীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাস্টবিন নেই। এটি অবশ্যই প্রশাসনের দায়। এটি তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। রাজধানী ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হলে, দ্রুত বর্জ্যমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই শহরকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে, অন্যথায় প্রতি বছরের ন্যায় রাজধানী ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ দূষিত রাজধানীর তালিকাতেই রয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে রাজধানীর প্রতিটি এরিয়ায় ডাস্টবিন স্থাপন, ডাস্টবিনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নাগরিকদের নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-বর্জ্য ফেলার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। প্রয়োজন হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ রাজধানীসহ বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নাগরিকরা যেখানে-সেখানে ময়লা-বর্জ্য ফেলার সাহস দেখায় না; কারণ তারা জানে যে সেনাবাহিনী এরিয়ায় এটা করলে তাদের শাস্তি হতে পারে। সেই ভয় থেকে অনেকেই শুধরিয়ে যায়। তাই জনসচেতনতার পাশাপাশি যথাযথ আইনের প্রয়োগও গুরুত্বপূর্ণ।

এই শহরে জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষজনের তৈরি ময়লা-বর্জ্যও তেমনিভাবে বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় রাস্তাঘাটে ময়লা-বর্জ্য। ফলের খোসা, কাগজ, প্লাস্টিকের ব্যাগ অথবা বোতল দেখা যাবে না, ঢাকায় এমন সড়ক বা পাড়া খুব কমই আছে। চলার পথে খোলা কনটেইনারের উপচে পড়া বর্জ্যকে নাকে হাত দিয়ে পাশ কাটানো অথবা বর্জ্য বহনকারী ট্রাক থেকে কিছু উড়ে এসে গায়ে পড়বে কি নাÑসেই উদ্বেগ নিয়েই রাস্তা চলতে হয় বহু পথচারীকে। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশের দেয়াল ঘেঁষে ফেলা হয় বাজারের ময়লা-বর্জ্য। এতে নাগরিকদের চলতে কষ্ট হয়, পরিবেশ থাকে নোংরা ও দুর্গন্ধময়। এসব রাস্তার পাশ দিয়ে চলার সময় নাকে রুমাল দিয়ে পথচারীদের চলতে হয়।

রাজধানী ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ময়?লা তৈরি হচ্ছে এবং পুরো দেশে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায়? প্রতিদিন যে পরিমাণে বর্জ্য উৎপাদিত হয়? তা থেকে ৬০ মেগাওয়?াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আর্থিক খাতের অগ্রগতি পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে চলছে। রাজধানীর বর্তমান দুই সিটি করপোরেশন অনেক স্থানেই নতুন ডাস্টবিন স্থাপন করেছে, তবে তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। এই সরকার কেন, এখন অবধি রাজধানীর বর্জ্যকে সরকারিভাবে রিসাইকেলিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আশা করি, সরকার খুব দ্রুত এ বিষয়ে যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

রাজধানীতে কোরবানির ঈদের দিন চার-পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে চার থেকে পাঁচ হাজার টন যে বর্জ্য তৈরি হয়? তা কিন্তু একদিনেই পরিষ্কার হয়ে যায়?। কিন্তু অন্যান্য দিন তা কেন হয় না? তার কারণ হলো, এই সময় রাজধানীর নাগরিকরা সমানভাবে সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করে। সুতরাং সবার সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় রাজধানী ঢাকা হবে দূষণ ও ময়লা-বর্জ্যমুক্ত একটি স্বচ্ছ শহর।

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

mdseyam71mahmud16bsl@gmail.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০