Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:28 pm

নিষিদ্ধ হর্ন আমদানি করল মীম অটোস

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: মানুষের স্বাভাবিক শব্দ গ্রহণের মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবেল (ডিবি) পর্যন্ত। আর ৬০ ডিবির বেশি শব্দ মানুষের সাময়িক এবং ১০০ ডিবির বেশি শব্দ সম্পূর্ণ বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে যানবাহনে ব্যবহৃত কিছু হর্ন রয়েছে, যেগুলো ৬০ ডিবি থেকে ১২০ ডিবি পর্যন্ত শব্দ উৎপন্ন করতে পারে। তাই ৭৫ ডিবির ওপরে হর্ন আমদানি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। তবে বাজারে চাহিদা থাকায় কিছু অর্থলোভী আমদানিকারক হরহামেশাই মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শব্দের হর্ন আমদানি করছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের মীম অটোস নামের এক প্রতিষ্ঠান জাপানের টয়োটা করপোরেশন থেকে এমন হর্ন আমদানি করে, যার শব্দের মাত্রা ১০৮ ও ১১০ ডেসিবেল। কিন্তু ৭৫ ডেসিবেলের ওপরে হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এসব হর্ন জব্দ করে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, মীম অটোস ‘হর্ন এলিফ্যান্ট ব্র্যান্ডের’ সাউন্ড সিগন্যালিং ইকুইপমেন্ট ফর সাইকেল অর মোটর ভেহিক্যাল ঘোষণায় জাপান থেকে সাড়ে তিন হাজার হর্ন আমদানির ঘোষণা দেয়। চালানটি খালাস করতে আমদানিকারকের পক্ষে গত ২১ অক্টোবর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে চট্টগ্রাম বন্দরের বারেক বিল্ডিং এলাকার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সুমিত ক্যারিয়ার লিমিটেড। তারপর চলতি মাসে চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে আনস্টাফিংকালে সাত হাজার হর্ন পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পরীক্ষায় ধরা পড়ে হর্নগুলো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, যার শব্দের মাত্রা ১০৮ ও ১১০ ডেসিবেল। ফলে আমদানিকারক ঘোষণার অতিরিক্ত ও আমদানি নীতির আদেশ অমান্য করায় পণ্যগুলো জব্দ করে কাস্টমস।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আনস্টাফিং শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার পূরবী সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, আমদানিকারক ১০৮ ও ১১০ ডেসিবেল মাত্রার হর্ন আমদানি করেন, যা আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮ অনুযায়ী আমদানি নিষিদ্ধ এবং বাজেয়াপ্তযোগ্য।

আমদানিকারকের পক্ষে খালাস করতে আসা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সুমিত ক্যারিয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাসগুপ্ত শেয়ার বিজকে বলেন, আমদানিকারক হর্ন আমদানির কথা বলেছে। এখানে শব্দের মাত্রার কথা উল্লেখ করেনি। তাই আমরাও বলতে পারি না। তবে আরেক দফা কায়িক পরীক্ষা করা হবে।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, একজন সুস্থ মানুষ ২০ থেকে ২০ হাজার স্পন্দনের শব্দ শুনতে পারে। আর মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০-৫০ ডিবি পর্যন্ত। কিন্তু এমন কিছু হর্ন রয়েছে যেগুলো ৬০ ডিবি থেকে শুরু করে ১২০ ডিবি পর্যন্ত শব্দ উৎপন্ন করে। সাধারণত ৬০ ডিবি শব্দ সাময়িকভাবে এবং ১০০ ডিবি শব্দ সম্পূর্ণভাবে বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ ধরনের হর্ন শব্দদূষণের ও স্বাস্থ্যহানির অন্যতম কারণ। 

আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্কুটার বা মোটরসাইকেলের হর্ন ৮৭ থেকে ৯২ ডিবি এবং ট্রাক-বাস ৯২ থেকে ৯৪ ডিবি শব্দ সৃষ্টি করে। শব্দের বাঞ্ছনীয় মাত্রা রয়েছে, যা ব্যক্তিগত কক্ষে ২৫ ডিবি, ড্রয়িং বা ডাইনিং কক্ষে ৪০ ডিবি, অফিসে ৩৫-৪০ ডিবি, শ্রেণিকক্ষে ৩০-৪০ ডিবি, গ্রন্থাগারে ৩৫-৪০ ডিবি, হাসপাতালে ২০-৩৫ ডিবি, রেস্তোরাঁয় ৪০-৬০ ডিবি এবং রাত্রিকালে শহর এলাকায় ৪৫ ডিবি। শব্দ এই সীমা অতিক্রম করলে শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। সীমার বাইরের শব্দদূষণ শ্রবণক্ষমতা নষ্ট করে। এর ফলে মানসিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হতে পারে। শব্দদূষণ খিটখিটে মেজাজ সৃষ্টিরও কারণ। এর দ্বারা ফুসফুস আক্রান্ত হয়, শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদের লেখাপড়ায় উদাসীন করে তোলে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সীমান্ত ওয়াদেদ্দার শেয়ার বিজকে বরেন, বিকট শব্দ সুস্থ মানুষের জন্য তো বটেই, শিশু, শিক্ষার্থী ও রোগীদের জন্যও ভয়ানক। এর কারণে মানুষ বধিরতার মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া হঠাৎ হর্ন বাজানোর ফলে মানুষের মনে ভীতির সৃষ্টি হয়। এই ভীতি মানসিক রোগের কারণ হতে পারে। তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপে উঠে এসেছে মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে এরই মধ্যে দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। তাই উচ্চ শব্দের হর্ন বাজানো বন্ধ করা উচিত।