‘নিষেধাজ্ঞার কারণে বেকার হবেন মস্কোর দুই লাখের বেশি কর্মী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দুই লাখের বেশি কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটি থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ায় এবং দেশটি ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরা নিশ্চিত চাকরি হারাবেন। চলতি সপ্তাহে এক ব্লগ পোস্টে বিষয়টি জানান মস্কোর মেয়র সের্গেই সবিয়ানিন। খবর: ডেইলি সাবাহ।

‘আমাদের ধারণা অনুযায়ী, প্রায় দুই লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারাতে চলেছেন’, পোস্টে উল্লেখ করেন সবিয়ানিন। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ এই ধকল সামলাতে কর্মীদের জন্য গত সপ্তাহে ৪ কোটি ১০ লাখ ডলার অর্থসহায়তায় এক কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।

‘অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যেসব স্থানীয় কর্মী কাজ করতেন, তাদের এই কর্মসূচির আওতায় অর্থ সহায়তা করা হবে,’ বলেন সবিয়ানিন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সেনাসদস্য নামানোর পর রাশিয়া থেকে সাড়ে সাতশর বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর একের পর এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রাশিয়া ছাড়ে কিংবা ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। তেল কোম্পানি থেকে শুরু করে অ্যাপল ও গুগলের মতো টেক জায়ান্টগুলোও দেশটিতে নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে শুরু করে। এ তালিকায় যুক্ত হয় ডেল, নকিয়া, বিপি, ইকুইনর, এক্সনমোবিল, শেল, ফোর্ড, ভলভো, ভক্সওয়াগন, হার্লে-ডেভিডসন, হোন্ডা, জাগুয়ার, ল্যান্ড রোভার, অ্যাস্টন মার্টিন, বিএমডব্লিউ, বোয়িং, এয়ারবাস, নাইকি, এডিডাস, ভিসা, মাস্টারকার্ড, ডিজনি, ওয়ার্নার, সনি, নেটফ্লিক্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এবং তালিকা বাড়ছে।

নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে চাকরি হারানো ৫৮ হাজারের বেশি কর্মীকে সহায়তা করা যাবে। প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কর্মীর জন্য পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে। বিপুলসংখ্যক কর্মীকে সরকারি বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করা হবে যারা শহরের বিভিন্ন সংস্থা যেমন পার্কে ও অন্য কোথাও জনসেবামূলক কাজের জন্য প্রস্তাব দেয়া হবে। তবে এতে অসন্তোষ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এ ধরনের কাজে অভ্যস্ত নন এবং তারা এসব কাজ

এড়িয়ে চলেন। এজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।

অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে রাশিয়ার অর্থনীতিতে। গভীর মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশই আগামী ২৫ বছরে এই যুদ্ধের ধাক্কা নাও কাটিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা ইউরোপিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের। যুদ্ধের কারণে সরবরাহব্যবস্থায় গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট দেখা দেয়। এতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের অর্থনীতি যথাক্রমে ১০ ও ২০ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে জানায় ইউরোপিয়ার ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইবিআরডি)।

রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার করণে দেশটি ৩ হাজার কোটি ডলার রপ্তানি আয় হারিয়েছে, যা তাদের মোট দেশজ আয়ের ২ শতাংশের সমান। নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হলেও রাশিয়া যে সুনাম হারিয়েছে তাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজে দেশটিতে যাবেন না। এর অর্থ, কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান হতেও সময় লাগবে।

প্রসঙ্গত ১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমারে স্বৈরশাসন চলছে। এ কারণে দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এতে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশটি। ২০১১ সালে সামরিক জান্তা ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয়, স্বাভাবিক হতে শুরু করে দেশটির পরিস্থিতি। বাড়তে থাকে বিদেশি কোম্পানির উপস্থিতি এবং কর্মসংস্থান হয় স্থানীয়দের। যদিও গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটির নিয়ন্ত্রণ ফের জান্তার হাতে চলে যায়। তবে ভূরাজনৈতিক কারণে রাশিয়া ও মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভিন্ন। কিছু মিলও রয়েছে। বিশেষ করে সামরিক আগ্রাসনের ক্ষেত্রে। পশ্চিমাদের ধারণা, রাশিয়ার পরিস্থিতি মিয়ানমারের মতো হতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০