শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনে রেকর্ড পরিমাণ তেল সরবরাহ করে সৌদি আরবকে টপকে বৃহৎ তেল সরবরাহকারী দেশ এখন রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ২০২৩ সালে চীনে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করেছে রাশিয়া। খবর: রয়টার্স।
চাইনিজ কাস্টমস ডেটা অনুযায়ী, গত বছর চীনে রেকর্ড ১০৭ দশমিক ০২ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল পাঠিয়েছে রাশিয়া, যা দিনে ২ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ব্যারেলের (বিপিডি) সমান। এ হিসাব অন্যান্য বৃহৎ তেল রপ্তানিকারক দেশ যেমন সৌদি আরব ও ইরাকের তুলনায় অনেক বেশি।
চীনের সবচেয়ে বড় তেল সরবারহকারী দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব। তবে সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে চীনে তেল আমদানির পরিমাণ ১ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৮৫ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে। ফলে সৌদি আরবের মতো মধ্যপ্রাচ্যের তেল জায়ান্টগুলো রাশিয়ার সস্তা অপরিশোধিত তেলের বাজারে তাদের আধিপত্য হারিয়েছে।
ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। এরপর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি কাটছাঁট করার কথা ঘোষণা করে। তবে এক জরিপে দেখা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনে তেল ও গ্যাস রপ্তানি করে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার আয় করে রাশিয়া। এর মধ্যে ৬১ শতাংশই আমদানি করে ইউরোপিয় ইউনিয়ন। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার ২০২২ সালে জানায়, বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার গ্যাস নিচ্ছে না বলে আয় কমতে শুরু করলেও আমদানি কমানোর চেষ্টায় ফাঁক-ফোকর থাকতে পারে।
তবে পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিলেও ২০২২ সালেই চীন, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কিনতে থাকে। এর মধ্যে রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেয়ার আহ্বান জানায় অনেক দেশ। সেই আহবানে সাড়া দিয়ে ওই বছরের ডিসেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেয়ার ব্যাপারে একমত হন। প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৬০ ডলার বেঁধে দেয়া হয়। ফলে তখন থেকে পশ্চিমাদের সমুদ্রপথে আসা রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার বা এর চেয়ে কম দামে কিনতে হবে।
মূল্য সামঞ্জস্যের জন্য বিশ্বের শীর্ষ তিন তেল উৎপাদকের মধ্যে দুটি দেশ সৌদি আরব ও রাশিয়া গত বছর উৎপাদন ও রপ্তানি হ্রাসের ঘোষণা দেয়। সৌদি আরব এরই মধ্যে এক মিলিয়ন বিপিডি উৎপাদনে কাটছাঁট করছে। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা এ বছর তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ বিপিডি রপ্তানি হ্রাস করবে।
চীনের পরিশোধনকারীরা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য মধ্যবর্তী বিক্রেতাদের কাছ থেকে রাশিয়ার তেল কেনা শুরু করে এবং জাহাজ ও বিমা-সংক্রান্ত বিষয়টি দেখভাল করে চীন।
বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারী দেশ হচ্ছে চীন। চীন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ রাশিয়াসহ ইরান ও ভেনেজুয়েলা থেকেও তেল কেনে। তাদের অবস্থান হলো, কোনো দেশ আরেক দেশের ওপর একপক্ষীয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটা তারা মানবে না। ইরানের কাছ থেকে চীনের জ্বালানি তেল কেনাও রেকর্ড পর্যায়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইরানের তেল উৎপাদন বাড়ছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে চীনের কাছে তেল বিক্রি।
ইরান, রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার যত তেল চীনে প্রবেশ করে, তার প্রায় সবই মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসে বলে দেখানো হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দুই কার্গো তেল কেনা ছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর চীন এসব দেশের কাছ থেকে আর কোনো তেল কেনেনি বলে কাগজপত্রে দেখা যায়।
২০২৩ সালে চীনের অপরিশোধিত তেল আমদানি রেকর্ড ৫৬৩ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন মেট্রিক টনে দাঁড়ায়, যা ১১ দশমিক ২৮ মিলিয়ন বিপিডির সমান।